মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
পদ্মায় নৌকাডুবি

বধূ বেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন সুইটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বধূ বেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন সুইটি

নববধূর বেশে গিয়েছিলেন স্বামীর বাড়ি। আর ফিরলেন লাশ হয়ে। এখনো হাতের মেহেদির রংই শুকায়নি তার। লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি জড়ানো আছে পরনেই।

 নতুনভাবে জীবনটা শুরুর আগেই পরপারে পাড়ি জমালেন নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০)। এক নৌকাডুবি কেড়ে নিল তার জীবনের সব স্বপ্ন। ঘটনার চার দিন পর গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর শাহাপুর এলাকার পদ্মা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুইটি খাতুন পূর্ণিমা রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে। রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নববধূ সুইটির মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে তাদের চার দিনের উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। রাজশাহীর পদ্মা নদীতে শুক্রবার নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৯ জনের মধ্যে কেবল সুইটির মরদেহই পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে সুইটির মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় অন্য কেউ আর অবশিষ্ট থাকল না। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ জনে। আর ঘটনার পর বিভিন্নভাবে উদ্ধার হয়ে এসেছেন আরও ৩২ জন। এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই রাজশাহীর পদ্মায় বর-নববধূকে বহন করা নৌকা ডুবেছে।

 মূলত এ কারণটি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কমিটির প্রধান রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কমিটি গঠনের সময় দুই কার্যদিবসের মধ্যে এর প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে রবিবার রাতেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু আরও কয়েকটি কাজ বাকি থাকায় গতকাল সকাল পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে এই নৌ-দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম বলেন, ছোট ওই ডিঙি নৌকায় যেখানে চার-পাঁচজন যাত্রী নেওয়া সম্ভব, সেখানে ২০ জনেরও বেশি যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। ফলে মাঝ নদীতে হালকা ঝড়ের কবলে পড়ে পরপর দুটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ওই দুই নৌকার মাঝি বা নৌকার যাত্রীদের কারও কাছেই লাইফ জ্যাকেট ছিল না। তাই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সে জন্য মাছধরার নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা ও প্রমোদতরী আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে নৌকার মাঝিরও বয়স নির্ধারণ করে দেওয়াসহ প্রতিটি নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা লিখে দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মার চরে বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে বর-নববধূসহ ৪১ জন যাত্রী নিয়ে দুটি নৌকা কনেপক্ষের বাড়িতে ফিরছিল। ফেরার পথে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় দুটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বর রুমনসহ ৩২ জন শুক্রবার রাতেই জীবিত উদ্ধার হন। পরে নিহত আটজনের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে প্রশাসন। গতকাল সুইটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর