মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

হাই কোর্টের নির্দেশ মাস্ক নিয়ে সিন্ডিকেট করলে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পর সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। একই সঙ্গে স্যানিটাইজার ও মাস্ক সংকট দেখা দেওয়ায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি। গতকাল আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে দৈনন্দিন বিচার কাজ শুরু হলে প্রধান বিচারপতি এমন উদ্বেগের কথা জানান। অন্যদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে দেশে মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম                 বাড়ালে ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাই কোর্ট। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। হাই কোর্ট বলেছে, একটা মাস্ক কিনতে যদি ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাগে সেটা দুঃখজনক। গতকাল সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের কার্যক্রম শুরু হলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে আমাদের বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। সরকার এবং চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা স্ট্রিক্টলি ফলো করতে হবে।

 যেমন হ্যান্ডশেক না করা, যতখানি সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা।

 

এ সময় একজন আইনজীবী বলেন, আদালত ছুটি দিয়ে দেওয়া হোক। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, তার প্রয়োজন নেই। অন্য একজন আইনজীবী বলেন, স্কুলগুলো ছুটি দিয়ে দেওয়া হোক। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন এটারও প্রয়োজন নেই। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগের এজলাসসহ চেয়ার টেবিল প্রতিদিন সকাল বেলা ডেটল দিয়ে সাফ করা হবে। সবাই হুঁশিয়ার থাকবেন। স্যানিটাইজার ও মাস্ক সংকটের বিষয়টি একজন আইনজীবী জানালে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।

সিন্ডিকেট হলে ব্যবস্থার নির্দেশ : গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ৫ মার্চ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি জানাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। ওই আদেশ অনুযায়ী গতকাল হাই কোর্টের এই বেঞ্চে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর মাস্কের বর্ধিত দাম নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক কেম এম কামরুল কাদের। তিনি আরও বলেন, সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয় কিন্তু যথেষ্ট নয়। সরকার যেসব প্রস্তুতি নিয়েছে, সেখানে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রস্তুতিতে সিরিয়াস ঘাটতি আছে।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান বলেন, মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে এটা নিয়ে বাজারে কোনো ধরনের ব্যবসা হয় কিনা পিয়াজের মতো, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল  কোর্ট দিয়ে তদারকি করতে হবে। কেউ যাতে বেশি দাম না নিতে পারে, মজুদ না করতে পারে। ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়ালে আমরা কেউ নিরাপদ না। যে ব্যবসায়ী মাস্কের ব্যবসা করছেন তিনিও না। এ সময় আদালতে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সরকার রিয়ালাইজ করতে পেরেছে আশা করি। কিন্তু ১০টাকার মাস্ক ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে তিনি বলেন, ইচ্ছে করলে সরকার সারা দেশে মাস্ক ফ্রি দিতে পারে। তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, যারা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন তাদের দেওয়া যেতে পারে। ১০-১৫ কোটি মাস্ক দেওয়া সম্ভব নয়।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে হাই কোর্ট বলে, আইইডিসিআর-এর একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রেস ব্রিফিং করেন। তার বক্তব্য আরও পজিটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটা যেন কোনোভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে। তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো জানানো দরকার। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৫ এপ্রিল দিন ধার্য করে হাই কোর্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর