বুধবার, ১১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ

মানিক মুনতাসির

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রকোপ মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকালই এ অর্থ ছাড় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অর্থ বিভাগ থেকে। আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে আপৎকালীন তহবিল হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে এ অর্থ ছাড় করে প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার নেতৃত্বে একটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রান্তিক/জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোর করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি অত্যন্ত নাজুক বলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। কেননা যেহেতু এটি এক ধরনের ভাইরাস, এ জন্য এ ভাইরাসে আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মতো সরঞ্জাম ও অন্যান্য সুবিধা দেশের জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট নয়। এ জন্য এসব হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মত প্রকাশ করা হয়। অর্থ বিভাগে পাঠানো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এ-সংক্রান্ত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা/উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে এবং রোগীদের সারিয়ে তুলতে কভিড-১৯ আক্রান্তদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়। এ জন্য ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতেও সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড, সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা, জেনারেল, বিশেষায়িত হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করে সরকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকালের বৈঠকে ঢাকাসহ সারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনদের ২৪ ঘণ্টা অ্যালার্ট থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে জেলাপর্যায়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের কোনো অবস্থাতেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা যাবে না বলে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কোনো জায়গায় করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে কাউকে পাওয়া গেলে দ্রুত হাসপাতালে এনে আইসোলেশন করা, প্রয়োজনে কোয়ারেন্টাইন, সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রাখার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ রোগ যেন কোনো অবস্থাতেই ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য আক্রান্ত কিংবা লক্ষণ দেখা গেলেই স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রতি জেলায় সিভিল সার্জন অফিসগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও জেলা সিভিল সার্জনের পাশাপাশি জেলা পরিষদ/উপজেলা পরিষদকে নিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে, সে কমিটিগুলোকে করোনা পরিস্থিতিতে সার্বক্ষণিক নজর রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ মনে করে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত পৃথক করে কোয়ারেন্টাইনে নিতে পারলে এ রোগের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব। তবে লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভুক্তভোগীকে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল কিংবা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে করোনার বিস্তার ঠেকানো অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর