বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

রোগের নাম সেলফি

মির্জা মেহেদী তমাল

রোগের নাম সেলফি

ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে সেলফি প্রবণতা। শিশু-কিশোররাও এখন রীতিমতো এই রোগে আক্রান্ত। পদ্মায় গোসল করতে নেমে যখন ডুবে যাচ্ছিল কলেজের ছাত্র আবির। তার বন্ধুরা সেলফি তোলাতে ছিল মগ্ন। একটি ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়, ডুবন্ত আবির হাত উঁচু করে বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও বন্ধুদের কারও দৃষ্টিই সেখানে যায়নি। আবিরকে না পেয়ে বিষয়টি শিক্ষকদের জানায় তার বন্ধুরা। শিক্ষকরা কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পদ্মায় জাল টেনে এবং ডুব দিয়ে খোঁজাখুঁজি করেও আবিরের সন্ধান করতে ব্যর্থ হয়। পরে খুলনা থেকে ডুবুরি দলের সদস্যরা গিয়ে গত ৯ মার্চ রাত ৯টার দিকে আবিরের লাশ উদ্ধার করে। এমনটা ঘটে হরহামেশাই। যেখানে সেখানে হরহামেশা সেলফি তোলায় ব্যস্ত এক শ্রেণির মানুষ। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কাজটি করে থাকেন তারা। কখনো কখনো ঘটে দুর্ঘটনাও। তবুও বিরতি নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেলফি নিয়ে ঘটছে অনেক ঘটনা। আর তাই তো সেলফি তোলাকে একধরনের মানসিক রোগ বলেছেন একদল গবেষক। রাস্তাঘাটে, যে কোনো মুহূর্তে, বন্ধুদের আড্ডা, বিয়েবাড়িসহ বিভিন্ন উপলক্ষে সেলফি তোলাটা এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়। এক ধরনের অবসেসিভ ডিজঅর্ডারের কারণেই এ সেলফি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তা এমন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে যে, বিপজ্জনক সেলফি তোলা থেকেও বিরত থাকছে না তারা।

জানা যায়, সেলফি তোলা যে একরকমের রোগ তা অনস্বীকার্য। নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং তামিলনাড়ুর থিয়াগারাজার স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের গবেষকরা যৌথভাবে এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ভারতকে। কারণ ভারতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায়ও ভারত এগিয়ে। ফলে ভারতের জনগণের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, রোগের নাম সেলফাইটিস। তার বেশ কয়েকটি ধাপও আছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, দিনে যারা তিনটি সেলফি তোলেন এবং প্রত্যেকটিই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, তারা অ্যাকিউট সেলফাইটিসে আক্রান্ত। আর ঘণ্টায় ঘণ্টায় যদি কেউ সেলফি তোলেন, আর তা পোস্ট করতে থাকেন, তবে তিনি ক্রনিক সেলফাইটিসে আক্রান্ত। সেক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীরা দিনে অন্তত ছয়টি করে সেলফি তোলেন। জানা যায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, সামাজিকভাবে নিজেকে সংযুক্ত রাখা, নিজের পরিপার্শ্বের রেকর্ড রাখার তাগিদেই এ কাজ করেন। অনেকে আবার মুড ভালো রাখার উপায় হিসেবেও দেখেন। আসলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাই ক্রমাগত ঠেলে দিচ্ছে সেলফির দিকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর