শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
মন্ত্রিপরিষদে চার সচিবের বৈঠক

করোনার প্রভাব কর আদায়ে

বাড়বে বাজেটে ঘাটতি, সরকারের পরিচালন ব্যয় নির্বাহে অসুবিধার আশঙ্কা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ে যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে, সেটি বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দেবে। রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় নির্বাহেও সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সরকারের সচিবরা। এ অবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ১৪ মার্চের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, দফতর ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সভা করে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ নেওয়ার। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সরকারের চার গুরুত্বপূর্ণ সচিবকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই নির্দেশনাসহ ৪টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, প্রত্যাশিত কর আদায় বাড়াতে করের আওতা সম্প্রসারণ করা এবং বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে ব্যবস্থা নেওয়া। ওই সভায় খোদ অর্থসচিব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে যে রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে তাতে বাজেট বাস্তবায়ন করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ করতে হলে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়বে। কারণ ব্যাংক ঋণ অনেক ব্যয়বহুল। সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে গত ১ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ সভা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ওই সভায় অংশ নেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার ও বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। সভায় জানানো হয়, জুলাই-জানুয়ারি প্রান্তিকে এনবিআর কর্তৃক নিট রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে এনবিআর কর্তৃক রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। তথ্য অনুযায়ী, ঘাটতির হার ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই সভার কার্যবিবরণীতে উল্লিখিত তথ্যে দেখা যায়, রাজস্ব ঘাটতি প্রসঙ্গে এনবিআরের সদস্য শুল্ক (নীতি এবং আইসিটি) বলেন, গত বছরের তুলনায় আমদানি অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, সেই প্রভাবেও আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব আয় কম হয়েছে। সভায় রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করে বলেন,  দেশে প্রায় ৪ কোটি ২৩ লাখ লোকের আয়কর প্রদানের সক্ষমতা থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ লোকের টিআইএন রয়েছে। জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আদায়ের হার কম উল্লেখ করে আয়করের আওতা বাড়ানোর জন্য এনবিআরকে পরামর্শ দেন অর্থ সচিব। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানান, কর অব্যাহতির চাপ, জনবলের অভাব, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি কারণে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে করারোপ সংক্রান্ত বেশ কিছু নীতির কারণেও কর আদায় কম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ অবস্থায় করের আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রগুলো খতিয়ে দেখা হবে এবং জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব হার বাড়ানোর বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। এনবিআর সূত্রগুলো জানায়, সভায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে গুরুত্ব দেওয়া হলেও করোনার প্রভাবে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। রাজস্ব ঘাটতির একটি বড় কারণ আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়া। জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি খাত থেকে ৫২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য থাকলেও আদায় হয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। ফলে এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এ অবস্থায় আগামী ৫ মাসে এ খাতে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন থেকে দেশের সর্বোচ্চ আমদানি হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ওই দেশটি থেকে আগের এলসি করা পণ্য নামমাত্র এসেছে। এখন কিছু কিছু এলসি করা শুরু হলেও স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে সময় লাগবে। অন্যদিকে দেশের প্রধান রপ্তানি আয় আসে ইউরোপের জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্স থেকে। ওই তিনটি দেশ এখন করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যয়ে আছে। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর