শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি - শেরপুর

গ্রুপিং থাকলেও চাঙ্গা আওয়ামী লীগ, নেতৃত্ব সংকট বিএনপিতে

শেরপুর প্রতিনিধি

চাওয়া-পাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপিং থাকলেও চাঙ্গা ভাব আছে শেরপুর আওয়ামী লীগে। আর মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত বিএনপি ঝিমিয়ে চলছে। এ দলের নেতৃত্ব অনেকটা একজনের হাতে। জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও অন্যান্য দলগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও বামদল জাসদ (ইনু) কখনো কখনো আওয়াজ দেয়। কমিউনিস্ট পার্টি নানা ইস্যুতে মাঝে-মধ্যে ক্ষুদ্র মানববন্ধন করে।  

গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব  চরমে উঠলেও মনোনয়ন ও সফলকাম হন সাবেকরাই। জেলার পাঁচটি উপজেলা নির্বাচনে তিনটিতেই জিতেছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। বাকি দুজন দল মনোনীত। দীর্ঘ দ্বন্দ্বের কারণে কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী সদরে পা রাখাই বাদ দিয়েছেন। মতিয়া চৌধুরী বিরোধীদের জেলা সভাপতি আতিউর রহমান এবং আতিক বিরোধীদের মতিয়া পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলে পরস্পরের অভিযোগ আছে। জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হালনাগাদ থাকলেও যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বয়স হয়েছে এক যুগেরও বেশি। কিন্তু গ্রুপিংয়ের কারণে সম্মেলন হয় না। ২০১৬ সালের ১৯ মে জেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন হুইপ আতিউর রহমান এবং চন্দন কুমার পাল। এর দেড় বছর পর হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অভিযোগ আছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের লোকজন কমিটিতে স্থান পেয়েছে। এখন গ্রুপিং ছাই চাপা থাকলেও সামনে পৌরসভা নির্বাচন ও জেলা কমিটি নিয়ে মাঠ গরম হতে শুরু করেছে। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুরু থেকেই এক বৃত্তেই আছেন। দলের একাংশের অভিমত, আতিক-চন্দনই জেলা আওয়ামী লীগে শেষ কথা। দলে আতিক বিরোধীদের দাবি, হুইপ আতিক দলে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন এমন কোনো নেতৃত্বকে গজাতেই দেন না। গত সংসদ নির্বাচন থেকেই সদর আসনের পাঁচবারের এমপি আতিউর রহমান আতিকের তনয়া সরকারি কর্মকর্তা ডা. শারমিন রহমান অমি সরকারি বা দলীয় কর্মসূচিতে সরব আছেন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে হুইপ আতিক উত্তরসূরি হিসেবে ডাক্তার কন্যাকে প্রস্তুত করছেন। হুইপ আতিকের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মী ও সাধারণের অভিযোগ, সরকারি সকল নতুন অফিস ভবন ক্ষমতাবলে তার বাড়ির কাছে বিশেষ এলাকায় নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড় আর নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। এক সময়ের দাপুটে বিএনপি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে চলছে সুনসান নীরবতা। পাঁচ বছরে দলের শীর্ষ চার নেতার মৃত্যুতে নেতৃত্বের সংকট চরম হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পরে গত ৬ আগস্ট জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। কমিটিগুলোতে এবার যুবকদের রাখা হয়েছে বেশি।

 পাঁচটি উপজেলা ও চারটি শহর বিএনপির কমিটি তিন বছর ধরে চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। গেল বছরের শেষ দিকে কমিটি গঠন নিয়ে দলীয় কার্যালয় কদিন সরগরম থাকলেও এখন আবার সেই আগের মতো। রাজনৈতিক ও অর্থ ঋণ সংক্রান্ত মামলায় দলের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী দুই বছর ধরে জেলহাজতে রয়েছেন। গেল সংসদ নির্বাচনে হযরত আলীর কন্যা সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দেশের সর্বকনিষ্ঠ এমপি প্রার্থী হিসেবে মাঠ অনেকটা কাঁপিয়ে ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর এক দিনের জন্যও ঢাকা থেকে শেরপুরে আসেননি। খবর নেননি বিপদগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের। এ কারণে প্রিয়াংকাকে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে বেশ। জেলা জাতীয় পার্টি ও জামায়াত অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। জাতীয় পার্টি অনেকটা জেলার সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিননির্ভর। জামায়াতের এক সময়ের কান্ডারিরা এখন অনেকেই মিশে গেছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে।

সর্বশেষ খবর