সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড ও জরিমানা করার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে কুড়িগ্রামে।
আরিফুল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আরিফুলকে আটকের পর নির্যাতন করে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার মিতু বলেন, ‘আমি যখন রাতে বিছানায় শুয়ে ছিলাম, তখন দরজায় কিছু লোক কড়া নাড়েন। আরিফুল ঘরের ভিতর থেকে বলেন, আপনারা কারা? কোথা থেকে এসেছেন? দরজার বাইরে থাকা লোকেরা বলেন, আমরা থানা থেকে এসেছি। এ সময় আরিফুল সদর থানায় ফোন করে কোনো লোক পাঠানো হয়েছে কি না জানতে চান। তখন থানার ওসি জানান, তারা কোনো লোক পাঠাননি। তারপর লোকগুলো দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে আরিফুলকে মারধর করে ধরে নিয়ে যান। এরপর রাত ১টার দিকে শুনতে পাই, ডিসি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা দেওয়া হয়েছে।’ শুক্রবার রাত ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ার বাড়ি থেকে আটকের পর আরিফুলকে তুলে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্সের মাদকবিরোধী অভিযানে গভীর রাতে তাকে আটক করা হয়। এ সময় আরিফুলের বাড়ি থেকে ৪৫০ এমএল দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয় বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা জানান।
বিএফইউজে ডিইউজের উদ্বেগ : দেশব্যাপী সাংবাদিকদের ওপর অব্যাহত হামলা-মামলা ও হয়রানি-নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে। গতকাল বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অন্য বিবৃতিতে রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার সভাপতি মোকছুদার রহমান মাকসুদ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।টিআইবির বিবৃতি : বাসা থেকে তুলে নিয়ে মোবাইল কোর্টে বিচারের মাধ্যমে কারাদন্ড দেওয়া বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী রাতের বেলা কোনো নাগরিককে বাসা থেকে তুলে এনে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অবৈধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, আইনের এমন যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ আইনের শাসনের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের পরিপন্থী এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে প্রশাসন তথা সরকারের ওপরই জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাঝরাতে ‘দরজা ভেঙে’ একজন নাগরিককে তুলে আনা এবং পরে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে কারাদন্ড দেওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া কারাদন্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে, তার স্বামীকে ‘আটক করার পর নগ্ন করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে’। এই অভিযোগের সত্যতা থাকলে, তা কেবল আইনের অপব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং যে বা যারা এই ঘটনায় জড়িত, তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে যে, আরিফুল জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের ‘নানা স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম’ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার জন্যই যদি তাকে এমন বেআইনিভাবে তুলে এনে বিচার করা হয়ে থাকে, তবে সেটা দেশের জন্য অশনিসংকেত।