সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

চেনাই যায় না শালকি

নদীর কান্না

আবদুল বারী, নীলফামারী

চেনাই যায় না শালকি

নাব্যতা হারিয়ে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে ডোমার উপজেলা শহরের বুক চিরে যাওয়া শালকি নদী। বছরের প্রতিটি দিন বহমান স্রোত ধরে রাখা এই নদীটি এখন কালের সাক্ষী। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে নদীটিকে দখলে নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করায় সংকুচিত হয়েছে এর আকার। কোথাও কোথাও আবার মাটি ফেলে নিজের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডোমার শহর থেকে উৎপত্তি হওয়া এই নদীটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন সুধিজনরা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চিকনমাটি থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটারের এই নদীটি মিলিত হয়েছে দেওনাই নদীতে। উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ মাথার বিভিন্ন অংশ অবৈধ দখলে যাওয়ায় নদীর মালিকানা অনেকটা দখলদারের কবলেই চলে গেছে। আগের শালকি আর এখনকার শালকি দেখলে মনেই হবে না এটি একটি প্রবহমান নদী ছিল। পানিপ্রবাহ না থাকায় যেটুকু আছে সেটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। এতে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি নদী শব্দটি মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। এতে আগামী প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না এখানে একটি নদী ছিল। প্রমত্তা এই নদীকে গ্রাস করেছে কতিপয় দখলদার। ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি স্থাপনা নির্মাণ করে যে যেভাবে পেরেছে দখলে নিয়েছে। সবখানে দেখা যাচ্ছে দখলের চিহ্ন। নদীপাড়ের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘এই তো সেদিনের কথা। নদী চব্বিশ ঘণ্টা পানিতে টইটম্বুর থাকত। গোসল করত মানুষ। কিন্তু এখন নদীটি তার যৌবন হারিয়েছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নদীর কোনো কোনো স্থানে বেড়া দিয়ে ভাগ করে রাখা হয়েছে। দেখলে মনে হয়, জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানার হয়ে গেছে। নদীটি নিয়ে মানুষের অনেক স্বপ্ন ছিল। মাছ শিকার করত তারা। কিন্তু কী অবস্থায় এখন এসেছে, বিশ্বাস করাই যায় না!’ নদীপাড়ের বাসিন্দারা মনে করেন, উপজেলা শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় পানিতে নিমজ্জিত থাকেন তারা। বিশেষ করে একটু বৃষ্টি হলে গোটা শহর তলিয়ে যায়। বর্ষার সময় তো দুর্ভোগের শেষ নেই। এর কারণ হিসেবেও নদীর নাব্যতা হারানো এবং সংকুচিত হওয়ার বিষয়টিকে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ডোমার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হক বলেন, শালকি নদীকে কেন্দ্র করেই চলত ডোমারের ব্যবসা-বাণিজ্য। একসময় যে নদীর ওপর দিয়ে নৌকায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। শালকি নদীটি এই শহরের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। নদীটিকে ব্যবহার করে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা যায়। ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নদীটি সংস্কার করা হলে এর রূপ বদলাবে। পানি ধরে রাখতে পারবে। আবারও মাছ পাওয়া যাবে। এটি নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বলেছি।’ জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শালকি নদীটি দ্বিতীয় পর্যায়ে খননের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ নিয়ে একটি পিপি তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। তিনি বলেন, অনুমোদন হয়ে এলে দ্রুত খনন কাজ শুরু করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর