সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মুজিববর্ষে প্ল্যান অতিরিক্ত ছয় লাখ মামলা নিষ্পত্তি

বেশি কাজ করার প্রস্তাব উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের

আরাফাত মুন্না

মুজিববর্ষে প্ল্যান অতিরিক্ত ছয় লাখ মামলা নিষ্পত্তি

মুজিববর্ষ সামনে রেখে দেশের আদালতগুলোতে থাকা পাহাড়সম মামলাজট নিরসনে মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এ বছর অন্তত পাঁচ থেকে ছয় লাখ অতিরিক্ত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট থেকেও মামলাজট নিরসনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জট নিরসনে বিচারকদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের পক্ষ থেকে। আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মুজিববর্ষকে মামলা নিষ্পত্তির বছর হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিচারক ও এজলাসের সংখ্যা বাড়ানো, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বাড়ানো। আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন, সহায়ক জনবল বাড়ানো, বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, মামলা ব্যবস্থাপনা ও বিচার প্রশাসনে তদারকি বাড়ানো এবং পুরনো আইন বিশ্লেষণ করা। জানা গেছে, মুজিববর্ষ সামনে রেখে গাজীপুর ও রংপুর মহানগরীতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও ২৫টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে সাতটি মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। পাঁচ বিভাগে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কাজও শেষ পর্যায়ে। স্থাপন করা হচ্ছে নতুন সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল। নতুন ছয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জনবলসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক বিষয়েও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেছে। বাকি প্রক্রিয়া শেষে এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর প্রায় ২০০ জন বিচারক পাচ্ছে বিচার বিভাগ। এর মধ্যে দ্বাদশ জুডিশিয়ারি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এরই মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর ত্রয়োদশ জুডিশিয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে প্রলিমিনারি (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুজিববর্ষে মামলাজট নিরসনের মহাপরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘মুজিববর্ষে অন্য বছরগুলোর তুলনায় অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ছয় লাখ মামলা নিষ্পত্তির টার্গেট নিয়েছি আমরা। সেইভাবে বিচারিক প্রোগ্রাম, আদালতের লোকবল প্রস্তুতির চেষ্টা করছি। এজলাস সংকট দূর করার পাশাপাশি বিচারকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বলা যায়, বড়সড় একটা পরিকল্পনাই করা হয়েছে।’ মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা কার্যকর করার ওপর জোর দেন আইনমন্ত্রী।

অতিরিক্ত কাজ করার প্রস্তাব বিচারপতিদের : মুজিববর্ষ সামনে রেখে দেশে বিচারাধীন মামলার জট কমাতে সপ্তাহে দুই দিন অফিসের সময় শেষে অতিরিক্ত কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে ফুলকোর্ট, যা আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা হতে পারে। এই সময়ে বিচারকরা দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন মামলাগুলো শুনানি ও নিষ্পত্তি করবেন। ১২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে উচ্চ আদালতের শতাধিক বিচারপতির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী মাসে ফের ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রধান বিচারপতিও তার ক্ষমতাবলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে প্রজ্ঞাপন আকারে কার্যকর হবে। ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিদের সবাই মামলাজট কমানোর বিষয়ে তাগিদ দেন এবং এ নিয়ে সবার উদ্যোগী ভূমিকার পক্ষেও মতামত তুলে ধরেন বলে জানা গেছে। বিধি অনুসারে, বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা সকাল ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত, মাঝে ১১টা থেকে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকেন। হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত, বেলা ১টা থেকে ২টা অবধি এক ঘণ্টা মধ্যাহ্ন ভোজ ও প্রার্থনার বিরতি দিয়ে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এ ছাড়া নি¤œ আদালতের বিচারকরা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে এক ঘণ্টা অবধি বিরতি দিয়ে বিচারকাজ পরিচালনা করে আসছেন। মুজিববর্ষ সামনে রেখে এর আগে ১২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। পরে ওই দিন এক সভায় মুজিববর্ষ উদ্্যাপনের লক্ষ্যে এ বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্যরা হলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।

সর্বশেষ খবর