সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বাতিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক রশীদের ব্যাংকের নিবন্ধন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশীদের পরিবারের মালিকানায় থাকা একটি অ-তফসিলি ব্যাংকের নিবন্ধন বাতিলের জন্য ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে কারণ দর্শানো নোটিস পাঠিয়েছে রেজিস্ট্রার অব বাংলাদেশ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)। গত ২ মার্চ এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

নিবন্ধন বাতিলের মুখে থাকা এ ব্যাংকটি হচ্ছে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড। ১৯১৩ সালে কুষ্টিয়ার খোকশায় প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী এ ব্যাংকটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে : দেশের কোথাও এর কোনো শাখা নেই। ব্যাংকটির ৮৫ হাজার শেয়ারের মালিকানা রয়েছে ফারুক-রশীদের পরিবারের হাতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুবিলি ব্যাংকের বিষয়ে আদালতের একটি রায় আছে। ওই রায় অনুসারে ব্যাংকটিকে ডিফল্ট নোটিস দিয়েছে আরজেএসসি। ৩০ দিনের মধ্যে তাদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালত রায় দেয়। ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ৩৪৬ ধারা অনুযায়ী ৩০ দিন সময় দিয়ে নিবন্ধন তালিকা থেকে ব্যাংকটির নাম কর্তনের বিষয়ে প্রথম ডিফল্ট নোটিস দিয়েছে আরজেএসসি। আলোচ্য সময়ের মধ্যে নোটিসের উত্তর না পেলে দ্বিতীয় নোটিস জারি করা হবে। দ্বিতীয় নোটিস জারির ৩০ দিনের মধ্যে কোনো জবাব না পাওয়া গেলে ব্যাংকটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সরকারি গেজেট জারি করা হবে। সূত্র জানায়, জুবিলী ব্যাংক নিয়ে আদালতের রায় ও রেজসকো’র এ উদ্যোগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও অবহিত করা হয়েছে। গত ১০ মার্চ এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠায়। এর আগে ২০১৬ সালে জুবিলী ব্যাংকে দুই আত্মস্বীকৃত খুনির শেয়ার ধারণ সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল আরজেএসসি। ওই সময় খুনিদ্বয়ের ধারণকৃত শেয়ার হস্তান্তরে সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছিল নিবন্ধক প্রতিষ্ঠানটি। একই সময়ে ওই শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চেয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুনে বাবুল হোসেন নামে জুবিলী ব্যাংকের এক শেয়ারধারী তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সেই ব্যাংকটিতে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির শেয়ারধারণ সম্পর্কে তথ্য দেন। শেয়ারধারী অভিযোগ করেন, ওই ব্যাংক থেকে প্রতি মাসে বড় অংকের মুনাফা পাচ্ছে খুনিদ্বয়ের পরিবার, যেটি দেশবিরোধী বিভিন্ন কর্মকা  ও জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর ওই বছরের ২৯ জুন অভিযুক্তদের শেয়ার বাজেয়াপ্তের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তখন বিএসইসি এ বিষয়ে নিজেদের অপারগতা উল্লেখ করে ফিরতি চিঠিতে জানিয়েছিল, যে জুবিলী ব্যাংক পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়; ফলে ওসব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ নেই তাদের। এ সময় ব্যাংকটির নিয়মিত এজিএম না করা, মুনাফা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকজন শেয়ারধারী আদালতে মামলা করেন। পরে ২০১৮ সালে আদালতের নির্দেশে ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে একজন নির্বাহী পরিচালককে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।   

জানা গেছে, গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠার পর তখনকার ভারত বর্ষের কোম্পানি আইন অনুসারে সোনা, গহনা ও জমি বন্ধকের বিনিময়ে ব্যবসা শুরু করে ব্যাংকটি। এরপর ১৯৮২ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করা জুবিলী ব্যাংক। পরে স্বর্ণ বন্ধকীর বিপরীতে ব্যবসা পরিচালনার সীমাবদ্ধতা রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পায়। পরবর্তী সময় স্বর্ণ বন্ধকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও চাষিদের সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় এ ব্যাংকটিকে। ব্যাংকটির একটি ওয়েবসাইট থাকলেও সেখানে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে খুব অল্পই তথ্য রয়েছে। উইকিপিডিয়ায় ব্যাংকটির ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা আছে, তার শেষের অংশটি হলো : ‘ব্যাংকটি কিছুটা কুখ্যাতি অর্জন করে এর কিছু শেয়ার মালিকানা কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ ও কর্নেল সাঈদ ফারুক রহমান, মেজর বজলুল হুদার অধীনে ছিল যারা কি-না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডে  জড়িত।’

সর্বশেষ খবর