বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে চলছে মডার্ন গ্রুপের নদী দখল

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে চলছে মডার্ন গ্রুপের নদী দখল

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নুনের টেক গ্রামের পাশে মেঘনা নদী দখলের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মডার্ন গ্রুপ নামের একটি কোম্পানির সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে দখল অব্যাহত রেখেছে দখলদার কোম্পানি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মডার্ন গ্রুপ মেঘনা নদী দখল করে জেটি নির্মাণ  অব্যাহত রাখায় ৩ মার্চ আইনজীবী মো. মহিউদ্দিন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মার্চ আদালত সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দখলকারী প্রতিষ্ঠান মডার্ন গ্রুপকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। মেঘনা নদী দখল বন্ধে প্রশাসন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না এ মর্মে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া মেঘনা নদীর দখল বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মডার্ন গ্রুপ তাদের দখল চালিয়ে যাচ্ছে।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের নারায়ণগঞ্জে মেঘনা নদী দখল করে মডার্ন গ্রুপ জেটি নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এর আগে মডার্ন গ্রুপ সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনের টেক এলাকার পার্শ্ববর্তী চর হাজী মৌজায় নদীটির এ অংশে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭০ বর্গফুট জায়গা দখল করে একটি জেটি নির্মাণ করে। পরে প্রশাসনের বাধার মুখে কিছু দিন কাজ বন্ধ থাকে। সেই কাজ ফের শুরু করেছে তারা। আর আগের জেটির পাশে জায়গা দখল করে প্রতিষ্ঠানটি আরও একটি জেটির নির্মাণকাজ শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মেঘনা নদী এবং এর তীরবর্তী চর হাজী মৌজার প্রায় ২৩০ বিঘা জমিতে গজারি গাছ ও বাঁশ পুঁতে নদী, নদীর পাশের সরকারি ভূমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি জোরপূর্বক অবৈধভাবে দখল করেছে মডার্ন গ্রুপ। স্থানীয় নুনের টেক ও বারদীর প্রভাবশালীদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে কোম্পানিটি নদীর ও তীরবর্তী কৃষকদের কৃষিজমি দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সরেজমিন নুনের টেক গিয়ে দেখা যায়, দ্বীপাঞ্চল খ্যাত নুনের টেকের চর হাজী মৌজার দুই পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী, নদীর ফোরশোর লাইন, খাস ও মালিকানা জমির ওপর ভেকু দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। ৫০-৬০ জনের একটি শ্রমিক দল নদীর পাড়ে তাঁবু খাটিয়ে কাজ করছেন। নদীতীরে সুরক্ষা দেয়াল তৈরির জন্য ইট, রড, সিমেন্ট, বালি জড়ো করছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রডমিস্ত্রি বলেন, ‘আমরা সবাই শ্রমিক। মডার্ন কোম্পানির ডকইয়ার্ড তৈরির কাজ করছি। এখানে নদী থেকে বড় বড় জাহাজ যাতে ওপরে উঠতে পারে সে জন্য স্লিপার তৈরির কাজ চলছে। এ জন্য নদীর তীর থেকে প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত যেতে হবে। অন্যথায় স্লিপার দিয়ে জাহাজ ওঠানো সম্ভব হবে না।’ ভুক্তভোগী কৃষক মোতালেব মুন্সী বলেন, ‘আমার নদীপাড়ের সাড়ে ৬ বিঘা, ভাইয়ের প্রায় সাড়ে ১০ বিঘা জমি না কিনেই জোরপূর্বক বাঁধ তৈরি করে দখলে নিয়েছে মডার্ন গ্রুপ। এসি ল্যান্ড এসে কাজ বন্ধ করার পর কোম্পানির পক্ষে এলাকার প্রভাবশালীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং নামমাত্র মূল্যে জমি বিক্রি করতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।’ চেঙ্গাকান্দী গ্রামের কৃষক ভুক্তভোগী চাঁন মিয়া জানান, তার প্রায় ৫ বিঘা জমি না কিনেই মডার্ন গ্রুপ স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাহায্যে দখল করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের বাধা দিলেও তারা তা শোনেনি।

আবদুস সাত্তারের ছেলে খাজা মিয়ার ৪ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। খাজা মিয়া প্রবাসী হওয়ায় আত্মীয়স্বজনের বাধা উপেক্ষা করে জমি দখল করে নিয়েছে। তারা জানান, নুনের টেকের আবুল হাশেম ও বারদীর আলী হোসেনের নেতৃত্বে জমি দখল করছে মডার্ন গ্রুপ। এ ব্যাপারে কোম্পানির পক্ষে জোরপূর্বক জমি দখলে অভিযুক্ত আবুল হাশেম বলেন, ‘আমি কারও জমি জোর করে দখলের সঙ্গে জড়িত নই।’ যোগাযোগ করা হলে মডার্ন গ্রুপের প্রতিনিধি জলিল মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের কাগজপত্র প্রসেসিংয়ে আছে। আমরা সরকারি খাসজমি ও নদী দখলের সঙ্গে যুক্ত নই।’ তাহলে কাগজপত্র জমা দিয়ে অনুমতির অপেক্ষা না করে কেন নদীতে গজারি গাছ ও বাঁশ পুঁতে দখল করছেন? এ প্রশ্ন শুনে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন জানান, নদী দখলে মডার্ন গ্রুপের সম্পৃক্ততা পেয়ে ডিমারগেশন লাইন টেনে লাল পতাকা উড়িয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হলেও কোম্পানির পক্ষে কেউ এখনো কোনো কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করেনি। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাত্র সাত দিন হয় সোনারগাঁয়ে যোগদান করেছি। তবে মডার্ন গ্রুপের দখলের ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইতিমধ্যে কোম্পানির সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এক ইঞ্চি নদীও কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যেসব কৃষকের জমি দখল করে নিয়েছে তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রশাসন তাদের জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর