শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু

নজর নেই কারও, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ২৬৫

জিন্নাতুন নূর

করোনার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু

দেশজুড়ে করোনাভাইরাস নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কের মধ্যেই এবার নতুন করে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আতঙ্ক শুরু হচ্ছে। যদিও বর্ষা মৌসুম তথা ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হতে আরও দুই মাসের বেশি সময় বাকি। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ২৬৫ জন মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অথচ গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩ জন। অর্থাৎ দেশের হাসপাতালগুলোতে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর চারগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু করোনার মতো ভয়ঙ্কর ও প্রাণঘাতী আরেক রোগ ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রণে সে অর্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। এ অবস্থায় পরিস্থিতি যদি আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, দেশে গত বছর মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ৩৫৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার জানুয়ারি মাসেই ডেঙ্গুতে যতজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, গত ১৯ বছরে এমন হয়নি। এবার বৃষ্টিপাত বেশি হলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। আর বর্ষার আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাবে।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ বছর এডিস মশার লার্ভার পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। এমনকি কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য অধিদফতর বর্ষা মৌসুম-পরবর্তী এডিস মশার লার্ভা শনাক্তকরণ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই জরিপ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ এই ছয়টি ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। এ অবস্থায় আসছে মৌসুমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। নাগরিকদেরও এ ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।

উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চীন থেকে আমদানি করা পাঁচ মাসের ওষুধ মজুদ আছে। এ ছাড়া আরও কিছু ওষুধ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিমাণ ওষুধ এক বছর ব্যবহার করা যাবে। এমনকি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ফোর জেনারেশনের ওষুধ আনারও পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তরে গত ডিসেম্বর থেকেই প্রতিটি ওয়ার্ডে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আবার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গত বছরের কিছু মেশিন মেরামত করতে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে নতুন মেশিনও কেনা হবে। বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রুটিন কার্যক্রম চলছে। আর এ কাজ তদারকির জন্য করপোরেশনের ১১টি টিম কাজ করছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ জানায়, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি ওয়ার্ডের ১৫টি বাড়িতে গিয়ে মশা নিরোধে তাদের লোক ওষুধ ছিটাচ্ছে। মার্চ থেকে আরও বেশিসংখ্যক বাড়িতে গিয়ে এ কার্যক্রম চালানো হবে। এরই মধ্যে ৭০ হাজার বাড়িতে গিয়ে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। দক্ষিণে এক হাজার ৩০০-এর মতো এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। এ মাসের শেষেও মশা মারতে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হচ্ছে। আর দক্ষিণে এডিস মশা মারার জন্য ভারত থেকে আমদানি করা ৯ থেকে ১০ মাসের ওষুধ মজুদ আছে। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে নাগরিকরা যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিবেশ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আমরা ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে তাদের খালসহ উন্মুক্ত স্থান পরিষ্কার করার জন্য বৈঠক করেছি। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আবার সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে যে সক্ষমতা আছে, তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে না পারলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’ ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার মশার প্রাদুর্ভাব বেশি বলেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। মশা এবার বেশি হলেও এগুলো বেশির ভাগই কিউলেক্স মশা। এবার বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দক্ষিণের ১০টি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর