শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

খাদ্য মজুদ স্বাভাবিক, চলবে এক বছর

মানিক মুনতাসির

খাদ্য মজুদ স্বাভাবিক, চলবে এক বছর

দেশে খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার অনেক আগে থেকেই কাজ করছে। এ ছাড়া দেশকে ক্ষুধামুক্ত করতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশে সরকারি পর্যায়ে খাদ্য মজুদ রয়েছে ১৭ লাখ ৫১ হাজার টন। চাল রয়েছে ১৪ লাখ ২৯ হাজার টন এবং গম রয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার টন। তবে সরকারি মজুদের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে বেসরকারি পর্যায়ে। দেশের মিলার, পাইকার, আমদানিকারক, খুচরা ব্যবসায়ী এবং কৃষক পর্যায়েও বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে। খাদ্য বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর বাইরে আটা, ময়দা, তেল, ডাল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য প্রচুর পরিমাণে মজুদ রয়েছে। এমনকি আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে ছোলা, খেজুরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যও আমাদনি করা হচ্ছে। চাহিদার সিংহভাগই দেশে মজুদ রয়েছে। ফলে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, ডাল, মাছ মাংস, আটা এবং শাক সবজি। এগুলো সবই আমাদের অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত। ফলে নিত্যপণ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই মুহূর্তে দেশে অন্তত এক বছরের প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি। খাদ্য বিভাগের খাদ্য সংগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমের গত ৫ মার্চ-২০২০ পর্যন্ত দেশে আমন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৭ টন। আমন আপত চাল ৪৩ হাজার ৪০১ টন এবং আমন ধান সংগ্রহ হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৭ টন। যা চালের হিসাবে মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার ২৭৪ টন। গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত খাদ্য আমদানির যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো, সরকারি খাতে ৩ লাখ ৮৪ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ৪৭ লাখ ৯১ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে। ফলে খাদ্যশস্যের মজুদ পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া মাসিক চাহিদা ও বিতরণ পরিকল্পনার তুলনায় পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) সারোয়ার মাহমুদ বলেন, খাদ্য  মজুদ পরিস্থিতি খুবই সন্তোষজনক। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার সারা বছরই মৌসুমভেদে খাদ্য শস্য সংগ্রহ করে। সে সব প্রোগ্রামও চালু রয়েছে। শুধু সরকারি পর্যায়েই নয় বেসরকারি পর্যায়ে আরও অনেক বেশি পরিমাণে খাদ্য মজুদ রয়েছে। খাদ্য অধিদফতরের ডিজি আরও বলেন, যে কোনো দুর্যোগ কিংবা সংকট মোকাবিলার জন্যও সরকারের ওএসএম পদ্ধতিসহ বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচিও চালু রয়েছে। সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী  দেশে ফিরে এসেছেন, এর জন্য খাদ্য চাহিদা কিছুটা বাড়বে। কিন্তু ১৮ কোটি মানুষের দেশে ৬ বা ৭ লাখ অতিরিক্তি মানুষের খাদ্য নিয়ে তেমন চিন্তার বিষয় নয়। কেননা আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানিও করেছি। ফলে খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে কোথাও কোনো ধরনের সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, সামনেই বোরো মৌসুম। এ মৌসুমেও বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। এ মৌসুমেও সরকারের বোরো সংগ্রহ অভিযান আগের মতোই চালু থাকবে।

এ বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ ম ল বলেন, আমার জানা মতে, খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি বেশ সন্তোষজনক। তবে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি খাদ্য মজুদ থাকে। আর এ বাজারটা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে মিল মালিকরা। সেক্ষেত্রে মিল মালিকরা যাতে কোনো ধরনের আতঙ্ক তৈরি করতে না পারে। সে বিষয়ে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রাখা এখন সবচেয়ে জরুরি। তিনি বলেন, আমাদের প্রতি বছর ৩ কোটি টন চালের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই আমরা নিজেরা উৎপাদন করি। পাশাপাশি প্রায় ৭০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু মাত্র ১০ থেকে ১১ লাখ টন গম উৎপাদন হয়। চাহিদার বাকিটা আমদানি করতে হয়। এর বাইরে একটা ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, ধান কাটা, মাড়াই, পোকা খাওয়া, ইঁদুরে খাওয়াসহ সব মিলিয়ে প্রতি বছর আমাদের ২৮ লাখ টন চাল নষ্ট হয়ে যায়। এ পরিমাণ চালের সদ্ব্যবহার করতে পারলে আমরা বিপুল পরিমাণ চাল রপ্তানিও করতে পারব।

সর্বশেষ খবর