শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
নদীর কান্না

পুনর্ভবা এখন শুধুই স্মৃতি

নওগাঁ প্রতিনিধি

পুনর্ভবা এখন শুধুই স্মৃতি

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এক সময়ের খরস্রোতা নদী পুনর্ভবা এখন শুধুই স্মৃতি। চৈত্র মাস আসতে এখনো বাকি এরই মধ্যে পুনর্ভবা নদীর পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুকনো  মৌসুমে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেওয়া হলে অন্তত মরা খালে পরিণত হতো না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফলেই নদীটি ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগে অনেকেই ধান চাষ করছেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে পুনর্ভবা নদীতে যে পানিপ্রবাহ হয় তার অর্ধেক পানি যদি শুকনো  মৌসুমে থাকে তবে নদীর তীরে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ফিরে আসবে। আর এর জন্য জরুরিভাবে নদী ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।

নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বামনগোলা ও তপন থানার বটতলী এবং লক্ষ্মী নারায়ণ গ্রামের  কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল, নিতপুরের কোল ঘেঁষে  গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে। স্থানীয় প্রবীণরা জানান, এককালে বার মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। ব্রিটিশ ও পাক-শাসনামলে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে  যোগাযোগের একমাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকমের পাল তোলা নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করত। সেই সময় এই নদীতে চলত মাল  বোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল- ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এই পথে  নৌকা যোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যাতায়াত করত। অতীতে এলাকায় কোনো গভীর, অগভীর নলকূপ না থাকায় ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকায় এই নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়াসহ নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকারের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসন ব্যবস্থা, সেই সঙ্গে নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার ঐতিহ্য। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেকটাই ফুরিয়ে যাওয়ায় সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ইতিকথা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খরা  মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না এটি একটি নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। সেই সঙ্গে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদী পাড়ের হাজার হাজার  লোকজন। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, নদীটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের আলোচনার মাধ্যমে খননকাজ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর