রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় দিনজীবীদের কমছে আয়, চিন্তা ঋণের কিস্তি নিয়ে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনায় দিনজীবীদের কমছে আয়, চিন্তা ঋণের কিস্তি নিয়ে

একটি এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) থেকে ঋণ নিয়ে রাজধানীর ফুটপাথে খেলনা বিক্রি করে সংসার চালান জামালপুরের মিনহাজ। করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে মানুষের চলাফেরা কমে যাওয়ায় ফুটপাথের দোকানটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে এই কদিন কোনো আয় করতে পারেননি ফুটপাথের সেই দোকানি। এখন বাড়ি ফিরে গেলে কীভাবে সংসার চলবে, আর কীভাবেই বা এনজিওর কিস্তি পরিশোধ হবেÑ সেই চিন্তায় দিন কাটছে দিনের আয়ে দিন চলা এই দিনজীবীর।

গত ১০ বছর ধরে রাজধানীতে অটোরিকশা চালান টাঙ্গাইলের কালিহাতীর সন্তোষ ম-ল। ছয় মাস আগে মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে এক লাখ টাকা ঋণ নেন একটি এনজিও থেকে। আয় ভালো থাকায় ছয় মাসে একটি কিস্তিও খেলাপি হয়নি। আশা ছিল সামনে রোজা ও ঈদে বেশি আয় করে এককালীন পুরো টাকা পরিশোধ করে দেবেন। কিন্তু করোনার প্রভাবে গত ৫ দিনে তার আয় নেমে এসেছে ২৫ শতাংশে। কপাল থেকে কাঁচাপাকা চুল সরাতেই চিন্তার বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে সন্তোষের। গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদককে জানান,  সারা দিন ক্ষেপ মেরে যে টাকা পাচ্ছেন, তা দিয়ে তিন দিন ধরে অটোরিকশা মালিকের ভাড়াই মেটাতে পারছেন না। প্রতিবেদক যেন এনজিও ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখতে একটি প্রতিবেদন করেন, সেই অনুরোধ জানান তিনি। ২০১৩ সালে লাগাতার হরতাল-ধর্মঘটে ঢাকা অচল  হয়ে যাওয়ার পরও এত খারাপ পরিস্থিতি হয়নি বলে উদ্বেগ জানান পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই অটোচালক। এনজিও কিস্তি নিয়ে এই উদ্বেগ শুধু জামালপুরের মিনহাজ কিংবা টাঙ্গাইলের সন্তোষ ম-লের নয়; এটি সারা দেশের নি¤œ আয়ের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। আয় কমলে পরিবারের খরচ কমিয়ে কোনোভাবে জীবনধারণ করা যায়। কিন্তু মাস শেষে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতেই হবে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরই মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের ঋণের কিস্তি আগামী জুন পর্যন্ত পরিশোধ না করলেও সেটি খেলাপি করা যাবে না। তবে বেসরকারি এনজিওগুলোর ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত  নেওয়ার জন্য পৃথক সংস্থা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) কিস্তি নিয়ে নি¤œ আয়ের মানুষের উদ্বেগের বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দিতে গেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ (মাইক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি)-এর মাধ্যমে দিতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে এমআরএর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা হয়তো আজ-কালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত দেবে। এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৬৯৯টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রহীতা রয়েছে ব্র্যাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের। এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি ঋণগ্রহীতা রয়েছে ব্র্যাক ও আশার। এক লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত ঋণদাতা এনজিওর সংখ্যা ২৬টি। আগে এসব এনজিওর ঋণের সুদের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ থাকলেও পরে সরকার সেটি ২৪ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়।

সর্বশেষ খবর