রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

গার্মেন্ট শিল্পে করোনা বিপর্যয়

২০০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে একের পর এক অর্ডার বাতিল হচ্ছে। একদিকে কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ সংকট, অন্যদিকে পুরনো অর্ডার বাতিল ও নতুন কোনো অর্ডার না আসায় চরম বিপর্যয়ে পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাত। ইতিমধ্যেই ঢাকার কিছু পোশাক কারখানার প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার এবং চট্টগ্রামের ৩৭টি গার্মেন্টসের ২১ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বা ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এই বাতিল ও স্থগিতাদেশের মধ্যে ২৫ শতাংশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ পণ্যের অর্ডারও রয়েছে। সূত্র মতে, করোনাভাইরাসের কারণে কিছু দিন ধরে তৈরি পোশাক শিল্পে চলমান অর্ডারের ওপর স্থগিতাদেশ আসছিল। গত কয়েক দিন ধরে অর্ডার বাতিলের সিদ্ধান্ত আসা শুরু করেছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও নামিদামি ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে। ফলে দিশেহারা অবস্থায় আছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। অর্ডার বন্ধ হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ৭০০ কারখানা থাকলেও চালু রয়েছে ২৫০টি। এর মধ্যে করোনার প্রভাব যাচাই করতে গিয়ে ১০৫টি কারখানায় জরিপ চালানো হলে সেখান থেকে উঠে আসে ভয়াবহ চিত্র। জরিপে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে ২৫টি পোশাক কারখানায় ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং ১২টি কারখানায় ৬ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। বাকি কারখানায় আরও অন্তত ৩০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামেই ৫০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। এদিকে বিকেএমইএর একটি সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্ডার বাতিল হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪টি কারখানার ১০৪ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গ্যাপ, নাইকি, ইন্ডিটেক্স, কলাম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার, রিফোরমেশনের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দেশে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করেছে। করোনার ধাক্কায় চট্টগ্রামের ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলের আড়াই লাখ ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার স্কয়্যার নিট কম্পোজিটের ২২ লাখ ডলারের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছে দুটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিটপি গ্রুপের চার লাখ ৬৬ হাজার ডলার, অ্যাপেক্স হোল্ডিংসের ৪০ লাখ পিস পোশাক, আমান গ্রাফিকস অ্যান্ড ডিজাইনের এক লাখ ১৩ হাজার ডলার, আমান নিটিংয়ের এক লাখ ৯৭ হাজার ডলার, স্কাইলাইন গার্মেন্টসের আট লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং রুমানা ফ্যাশনের ৯০ হাজার পিস পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারকরাও পড়েছেন বিপর্যয়ের মুখে। দেশের চাহিদার ৯০ শতাংশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ উৎপাদন হয় এখানেই। আমদানিনির্ভর কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে হ্যাংগার, পলিব্যাগ, কার্টন, ইলাস্টিক, সুইং থ্রেড থেকে শুরু করে সব এক্সেসরিজ এখন দেশেই উৎপাদন হয়। যে পরিমাণ পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়েছে সেখানে ২৫ শতাংশই এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যাংক এলসি ও ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা এ এক্সেসরিজ কারখানার মালিকরা এখন ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন বলে জানান বিজিএপিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ সমিতির)-এর প্রথম সহসভাপতি খোন্দকার লতিফুর রহমান আজিম। তিনি বলেন, এ বৈরী অবস্থা মোকাবিলার জন্য আমাদের সবাইকে শক্ত হতে হবে। এ শিল্পকে বাঁচাতে আগামী ৬ মাসের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর সুদ মওকুফ করতে হবে।  এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪১টি ব্র্যান্ডের ক্রেতাগোষ্ঠীর কাছে একটি জরুরি ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি তার ই-মেইলে বাংলাদেশের ৪১ লাখ শ্রমিকের বেতন-ভাতা, বিশেষ করে আসন্ন দুটি ঈদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আগামী জুলাই পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার না করার জন্য ক্রেতাগোষ্ঠীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর