সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় বাবার মৃত্যু নিয়ে ছেলের আবেগঘন স্ট্যাটাস

প্রতিদিন ডেস্ক

ঢাকার মিরপুরে ‘করোনায় মৃত’ ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে তার ছেলে ইকবাল আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে নানারকম ভুল সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। এ কারণে সত্য প্রকাশে বাধ্য হলাম।’ ইকবাল আবদুল্লাহর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য শুধু ভাষাগত সংশোধনপূর্বক প্রকাশ করা হলো : ‘পিতার মৃত্যু এবং সন্তানের ব্যর্থতা’ শিরোনামে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি পিতার মৃত্যুর ঘটনা এই ভাবে লিখতে হবে। কিন্তু কিছু মিডিয়ায় মিথ্যা রিপোর্ট দেখে বাধ্য হলাম ফেসবুকে কিছু সত্য প্রকাশের। গত ১৬ মার্চ আব্বা অসুস্থ বোধ করলে বিকালেই তাঁকে কল্যাণপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় আমরা সবাই অফিসে। আমি অফিস থেকে বাসায় এসে শুনলাম চিকিৎসক ধারণা করছে, উনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং কভিড-১৯ টেস্টের প্রস্তাব করেছে। এরপর রাতেই টেস্টের জন্য আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন দেওয়া শুরু করি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হই। তারা জানায়, যেহেতু অসুস্থ ব্যক্তি বিদেশফেরত নন এবং বিদেশফেরত কারও সংস্পর্শে আসেননি, সে জন্য ওই টেস্ট ওনার জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি তাদের বলেছিলাম উনি বাইরে যান এবং ওখান থেকে এই ভাইরাস আসতে পারে কিনা?। তারা বলেছেন করোনাভাইরাস বাংলাদেশে কমিউনিটিতে গণহারে এখনো সংক্রমিত হয়নি। সুতরাং আপনারা চিন্তা করবেন না, এটা সাধারণ শ্বাসকষ্টের সমস্যা। ওই রাতে সাড়ে ১০টায় আমি তাঁকে শ্যামলীর একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাই। তিনি বলেন, রোগীর নিউমোনিয়া হয়েছে। তাঁকে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দিতে হবে। তবে কোনো হাসপাতাল এই রোগীর ভর্তি নেবে না। আপনারা বাসায় চিকিৎসা করান। আমি ওই রাতে বাসায় চলে আসি এবং আব্বাকে নেবুলাইজার দেওয়া এবং মুখে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে থাকি। অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন দুপুরে আব্বাকে নিয়ে যাই শ্যামলীর ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তারা রোগী দেখে বলে যে, রোগীর অবস্থা ভালো না, তাঁকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হবে। কিন্তু আইসিইউ তারা দিতে পারবে না। এরপর পাশের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করি। ১৫ মিনিট পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বললেন এই রোগী তারা রাখতে পারবেন না। এরপর রোগী নিয়ে কল্যাণপুরের একটি হাসপাতালের কেবিনে রাখি। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন এই রোগীর আইসিইউ লাগবে। আপনারা দ্রুত আইসিইউর ব্যবস্থা করেন। অনেক চেষ্টায় মিরপুরের ওই হাসপাতাল আইসিইউ দিতে রাজি হয়। রাত ৪টায় আব্বাকে নিয়ে সেখানে আইসিউতে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টার পর থেকে আব্বা লাইফ সাপোর্টে চলে যান। ১৮ তারিখ দুপুর থেকে আমরা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু ব্যর্থ হই। এরপর ১৯ তারিখ বিকালে আইইডিসিআর রাজি হয় এবং রাতে টেস্ট করেন। পরের দিন ২০ মার্চ দুপুরে আইইডিসিআর জানায় যে, রিপোর্ট পজিটিভ। আমাদের ১৫ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে।

রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর থেকে ওই হাসপাতাল আমাদের চাপ দিতে থাকে লাইফ সাপোর্ট খুলে  দেওয়ার অনুমোদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা অনুমতি না দিয়ে তাদের বলতে থাকি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে। কিন্তু তারা আর রোগীর কাছেও যায়নি এবং আমাদের আইসিইউর ভিতর ঢুকতেও দেয়নি। যা হোক আমার আব্বু অবশেষে ২১ তারিখ ভোর তিনটায় ইন্তেকাল করেন। আমরা সন্তানরা ব্যর্থ, পিতার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। এমনকি তার জানাজায়ও আমরা উপস্থিত থাকতে পারিনি। সন্তান হিসেবে এর চেয়ে কঠিন আর কিছুই হতে পারে না। বুকে পাথর বেঁধে বাসায় অবস্থান করছি। সরকারের আইন মেনে ১৫ দিন এভাবেই থাকতে হবে। কিন্তু কিছু গণমাধ্যম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমার ভগ্নিপতি বিদেশ থেকে বাসায় এসেছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার দুই ভগ্নিপতি। বড় বোন এবং তার স্বামী চট্টগ্রামের দুটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক। অন্য ভগ্নিপতি জাপান থাকেন। তিনি এক বছরের মধ্যে আসেননি। আমার বাবা যেদিন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে চলে যান সেদিন মানে ১৯ তারিখে আমার বড় বোন এবং বড় দুলাভাই চিটাগং থেকে আমাদের বাসায় আসেন এবং তারাও হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করছেন।’

সর্বশেষ খবর