রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
নদীর কান্না

দখলে বিলুপ্ত হচ্ছে মগড়া

আলপনা বেগম, নেত্রকোনা

দখলে বিলুপ্ত হচ্ছে মগড়া

নেত্রকোনার মগড়া নদী ঘিরে এক সময় গড়ে উঠেছিল শহরের সভ্যতা। আজ সেই নদী যেন হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। নেত্রকোনা শহরকে চারদিক থেকে বেষ্টন করে রাখা সেই মগড়া এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি দখলের কবলে নদীটি শীর্ণকায়। জেলা শহরের ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নদীটি। অনেক বাড়ি বা হোটেল-মোটেল রয়েছে, যেগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন পাইপের সংযোগ দেওয়া হয়েছে মগড়ায়।

পূর্বধলার ধলাই নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ধনু নদী পর্যন্ত মাঝের ১৪৮ কিলোমিটার মগড়া। এ নদীর তীরগুলো ছিল জেলেদের আশীর্বাদ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই নদী আর নদী থাকেনি। ফলে এক সময় মগড়াকে কেন্দ্র করে যে জেলে পরিবারগুলোর আহার জুটত, এখন আর তা নেই। নদীর দুই পাড়ে ৫৩৮টি জেলে পরিবার বাস করত, যারা আজ পেশা হারিয়েছে। মগড়ার দুই তীরে শুধু আটপাড়া উপজেলায় বসবাস করত ২৭৬টি জেলে পরিবার। তাদের কেউই এখন আর সেই পেশায় নেই।

স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোকে দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে নেত্রকোনার মগড়া নদীটিরও দখল উচ্ছেদে অভিযানে নামে সরকারি সংস্থাগুলো। মোট ৩১৬টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা হলেও দখলকারীরা আদালতে মামলা করলে ২৪টি স্থাপনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এতে করে ২৯৯টির মধ্যে ২৮৮টি স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে বলে ভূমি অফিস দাবি করেছে।

কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের পৌর এলাকার তিন কিলোমিটারে এমন ৫৫টি পয়েন্ট রয়েছে, যেগুলো অবৈধ দখলে। এই ৫৫টি পয়েন্টে এখনো অভিযান চালানো হয়নি। এ ছাড়া সব নদী সিএস মূলে উচ্ছেদ অভিযান চললেও নেত্রকোনার মগড়ার বেলায় বিআরএস মূলে অভিযান চলায় বেশির ভাগ স্থাপনাই রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের সাতপাই আনন্দবাজার এলাকার সওদাগরপাড়া থেকে শুরু করে পাটপট্টি ব্রিজ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু নদীর পাড়ে একদিকে এসকেভেটর দিয়ে প্রশাসন উচ্ছেদ করলেও দখলদাররা পুনরায় ইটের গাঁথুনি দিয়ে গড়ে তুলেছেন স্থাপনা। এমতাবস্থায় মগড়া নদীটির জীবন ফিরে পাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়েছে। মগড়া হারিয়েছে তার রূপ, সৌন্দর্য, গুণ। জেলা শহরের ডাস্টবিন হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে নদীটি। অনেক বাড়ি বা হোটেল-মোটেল রয়েছে, যেগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ সংযোগ দেওয়া হয়েছে মগড়ায়। এতে করে এসব বাড়ি ও হোটেল- মোটেলের ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য গিয়ে মিশছে নদীটিতে। এতে করে মগড়া পরিণত হচ্ছে মৃত নদীতে।

জানা গেছে, এক সময় মগড়া নদীর ওপর দিয়ে চলাচল করত বড় বড় লঞ্চ-স্টিমার। অনেক ধরনের পণ্য পরিবহন হতো এ নদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফলে এই বাণিজ্য ঘিরে নেত্রকোনা শহরের সভ্যতা গড়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ ব্যবসার জন্য এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। এভাবেই নেত্রকোনায় নগর সভ্যতার শুরু হয়। কিন্তু কালের আবর্তে দখল আর দূষণে মগড়ার গৌরব হারিয়ে এখন এটি মৃতপ্রায়। নদীটি পরিণত হয়েছে সরু নালায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর