সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব হারানো সেই খরস্রোতা ঝিনাই

নদীর কান্না

জামালপুর প্রতিনিধি

অস্তিত্ব হারানো সেই খরস্রোতা ঝিনাই

জামালপুরে এক সময়ের খরস্রোতা ঝিনাই নদীর ওপর নির্মিত ঝিনাই ব্রিজের নিচে এখন সবুজ মাঠ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নদীর উজান মুখে বাঁধ নির্মাণ, দীর্ঘদিন খনন না করা এবং অবৈধ দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী ঝিনাই। এক সময় এ নদীর বুক চিরে আসা-যাওয়া করত বড় বড় নৌকা, আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত স্থানীয় জেলেরা। আজ সেই ঝিনাই নদীর বুকে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শীর্ণ খালের মতো নদীর যেটুকু টিকে আছে, তাও যেন মুছে যাওয়ার অপেক্ষায়।

প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যেত বলে স্থানীয়রা নদীর নাম দিয়েছিল ঝিনাই নদী। খরস্রোতা ঝিনাই নদীর বুকে বড় বড় বজড়া আর পাল তোলা নৌকার আসা-যাওয়া ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য। একটা সময় জামালপুর থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় যাতায়াতের পথও ছিল এই নদীই। মাছের ভান্ডার খ্যাত ঝিনাই নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা চলত স্থানীয় জেলেদের, আর নদীর পানি ব্যবহার হতো সেচ কাজে। ঝিনাই নদীর বৈচিত্র্যময় এসব দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। প্রায় দুই যুগ আগে বাঘলদি এলাকায় ঝিনাই নদীর উজানে বাঁধ দেয় স্থানীয়রা। এরপর থেকেই খরস্রোতা ঝিনাই নদী তার যৌবন হারাতে শুরু করে। নদী খননের উদ্যোগ না নেওয়ায় দিনের পর দিন নাব্যতা হারিয়ে ঝিনাই নদী এখন পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। স্থানীয় জেলেরা নদীতে জাল ফেললেও দেখা মেলে না মাছের। এখন নদীর বুকজুড়ে শোভা পাচ্ছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। নদী দখল করে তৈরি করা হয়েছে বসতবাড়ি, ইটভাটা। উত্তর বঙ্গের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ উন্নয়নে ব্রিটিশ আমলে যে নদীকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছিল ঝিনাই রেল ব্রিজ, আজ সেই ব্রিজের নিচে ঝিনাই নদীর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে, এখন শুধুই সবুজ মাঠ আর গরুর বিচরণ। জামালপুরের সঙ্গে মেলান্দহ, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর পূর্ব পর্যন্ত ওই তিন উপজেলায় যাতায়াতের জন্য বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ঝিনাই নদী পারাপার হতো বৃহৎ খেয়া নৌকায়, যা আজ শুধুই অতীত। বর্তমানে ঝিনাই নদীর যেটুকু খালের মতো টিকে আছে বর্ষাকালে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা পরিণত হয় বালুচরে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, জামালপুরের ছোট-বড় সবকটি নদীই আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আর ঝিনাই নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনতে নদী খনন অত্যন্ত জরুরি।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নদী, খাল উদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে গবাখালী খাল ও পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয়েছে। ঝিনাই নদীর পুরনো যৌবন ফিরিয়ে আনতে অবৈধ বাঁধ এবং দখল মুক্ত করতে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়াও পর্যায়ক্রমে জামালপুরের সবকটি নদী ও খাল পুনঃ উদ্ধারে যাথাযথ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর