শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি, স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা নড়াইলে

গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গাজীপুরে দুজন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলের লোহাগড়ায় ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ছেড়ে দেওয়ায় এক স্কুলছাত্রী (১৬) আত্মহত্যা করেছে। গতকাল সকালে সে নিজ বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের ধলইতলা গ্রামে। আত্মহননকারী মেয়েটি ইতনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

মেয়ের মা মঞ্জু বেগম জানান, ঝুলন্ত অবস্থায় গতকাল সকাল ৮টার দিকে মেয়েটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহ উদ্ধারের সময় টেবিলের ওপর মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি চিঠি পাওয়া যায়। চিঠিতে মেয়েটি লিখেছে, ‘মা হাকিমকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। ও  যে এমন একটা কাজ করবে আমি তা কখনো ভাবিনি। আমি ওকে কোনো দিন ক্ষমা করব না। আমাদের দুজনের বিষয় নিয়ে মানুষ তোমাকে নানান কথা বলছে। আমার একটি ভুলের জন্য তোমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। এই কষ্টটা আর আমি নিতে পারছি না। তাই আমি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও মা।’ নিহতের চাচা চান্দু শেখ জানান, প্রতিবেশী গোলাম মুন্সির ছেলে সৌদি প্রবাসী  আবদুল হাকিম মুন্সির (২৪) সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় এক মাস আগে হাকিম সৌদি আরব চলে যায়। হাকিম দেশে থাকতে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে আপত্তিকর সম্পর্কের ছবি তোলে। সেই ছবিগুলো গত মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। হাকিম ও মেয়েটির আপত্তিকর এসব ছবি স্থানীয় লোকজন ফেসবুকে দেখতে পায়। এতে এলাকায় নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়। মানুষ নানা কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকালে মেয়েটি আত্মহত্যা করে। মেয়েটির আত্মহত্যার কথা শুনে ছেলের পরিবারের সব সদস্য পালিয়ে গেছেন। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, মেয়েটির মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট), পর্নোগ্রাফি আইন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে বলে তিনি জানান। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গাজীপুরে দুইজন আটক : ফেসবুকে করোনাভাইরাস কভিড-১৯ নিয়ে গুজব সৃষ্টির অভিযোগে দু’জনকে আটক করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- আবদুর রহমান মিলন (৪৮) এবং আমিনুল ইসলাম বিল্লাল (৩৩)। বুধবার রাতে গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও কাপাসিয়া থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে গুজব সৃষ্টির স্ক্রিনশটের কপি এবং সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী ফেসবুকের পোস্ট করা কপি জব্দ করা হয়। গতকাল র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় কোনাবাড়ীর হরিনাচালা বাজারের পন্ডিত আলী প্লাজা মেসার্স রাজশাহী মেডিকেল সেন্টার কেমিস্ট এ্যান্ড ড্রাগিস্ট নামে এক দোকানের সামনে থেকে মিলনকে আটক করা হয়। রাত ৯টার দিকে কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া চালা বাজারে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রের সামনে থেকে বিল্লালকে আটক করা হয়। এ সময় দুটি মোবাইল ফোন, গুজব সৃষ্টিকারী স্ক্রিনশটের ৯টি কপি এবং সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী ফেসবুকের পোস্টের ৫টি কপি জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে জানা যায়, তারা তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য পোস্ট, শেয়ার এবং বিভিন্ন কমেন্টসের মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করে জনমনে বিভ্রান্তি ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টিসহ সামাজিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টার কথা স্বীকার করেছে। মিলন কোনাবাড়ীর একটি ওষুধের ফার্মেসিতে ১৮ বছর ধরে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, সরকারি কর্মচারীর গায়ে আঘাত করা এবং ভাঙচুরের অভিযোগে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা রয়েছে। এ মামলায় আটক হয়ে এক মাস কারাভোগও করেছে। বিল্লাল কাপাসিয়ার একটি ইলেক্ট্রনিক্স শোরুমে কাজ করে।

সর্বশেষ খবর