রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
পর্যবেক্ষণ

সামনের তিন মাসে আমাদের করণীয়

কেএএস মুর্শিদ

১. বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কখন সবচেয়ে বেশি হতে পারে, যদি এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিদরা আলোকপাত করতে পারেন, তবে এটি পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করবে।

২. নীতি-নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে পরিপালনের জন্য- সশস্ত্র বাহিনী, এনজিওসহ পরীক্ষিত এজেন্সিগুলো ব্যবহার করতে হবে। নীতি-নির্দেশনাগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দয়া করে যে কোনো ধরনের জমায়েতগুলোতে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করুন। কারফিউ দিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যেতে পারে- পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী এসব ঘোষণা শিথিল করা যেতে পারে। ৩. জরুরি প্রয়োজনে কিট, মাস্ক, পিপিই এবং ভেন্টিলেটর পেতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগঠিত রাখতে হবে যাতে করে সংকট ঘনীভূত হলে এসব সামগ্রী পাওয়া যায়। আমাদের হাতে সম্ভবত ৪-৬ সপ্তাহ সময় রয়েছে (করোনা সংকট ঘনীভূত হতে)- আসুন, এ সময়ের সদ্ব্যবহার করি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ চেইন স্থাপনের জন্য একটি স্মার্ট টাস্কফোর্স নির্ধারণ করতে হবে।

৪. দেশের ১৫-৮০ বয়সী মানুষের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ অথবা প্রতি পরিবারে কমপক্ষে এনজনকে পরীক্ষা করার একটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা দরকার।

৫. জরুরি প্রয়োজনে কভিড-১৯ রোগীদের ভেন্টিলেটর ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে, সেজন্য দেশের চিকিৎসা এবং প্যারা-চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে জরুরি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

৬. খুবই গুরুতর রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নিবেদিত ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালে স্থান সংকুলানের সুযোগ রাখার উদ্দেশে মেডিকেল ইউনিট স্থাপন করতে হবে। করোনাক্রান্ত যেসব রোগীর বাড়িতে চিকিৎসা সম্ভব, তাদের বাসায় চিকিৎসা দিতে হবে।

৭. দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষকে সহায়তার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করতে হবে (গ্রামীণ : ৩৫% থেকে ৫০%; শহরে : ১০% থেকে ২০%)।

৮. ত্রাণ প্রচেষ্টা সমন্বয় : নিরাপদে এবং সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ সরবরাহ করতে বিভিন্নস্থানে বিতরণ পয়েন্ট স্থাপন করতে হবে। ত্রাণ সরবরাহকারীরা মিডিয়া কর্র্তৃক স্বীকৃত হতে হবে (যেহেতু এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে)।

৯. বিতরণ কেন্দ্র :

ক। সরকার : সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির জন্য কেন্দ্র নির্ধারণ করবে।

খ। এনজিওগুলো : তাদের নিজস্ব বিতরণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা উচিত।

গ। অন্যান্য : ব্যক্তি, সমিতি, গোষ্ঠী, আপৎকালে সহায়তা দিতে আগ্রহীদের ত্রাণ বিতরণের জন্য বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বৃহত্তর মসজিদকে মনোনীত করা যেতে পারে এবং নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ তদারকির জন্য মসজিদ কমিটিগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। বিতরণ কেন্দ্রগুলোর প্রাঙ্গণ প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করা উচিত এবং ত্রাণকর্মীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

১০. আমাদের তথ্য দরকার : সরকার, মিডিয়া, এনজিও, সামাজিক সংস্থা, গবেষক সবার উচিত যেখানেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাবে, তার ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করা। কারণ আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো শনাক্ত করতে হবে এবং পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট সঙ্গে নিয়ে সেখানে যেতে হবে। একটি নিবেদিত গ্রুপকে দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে তারা অবিচ্ছিন্নভাবে সব তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি জিআইএসভিত্তিক তথ্য সংস্থান তৈরি করে অনলাইন প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিয়মিত আপডেট দিতে পারে।

১১. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর তীক্ষè নজর রাখা দরকার।

১২. অর্থনীতি : অর্থনীতিকে একই সময়ে লকডাউন এবং উদ্দীপিত করা চলে না। লকডাউন (দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক) এর অর্থ এই নয় যে অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতি হবে। তবে এর জন্য আমাদের মূল্য দিতে হবে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে উদ্দীপনা প্যাকেজ কার্যকর করতে হবে। এরই মধ্যে, যাদের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের নিরাপত্তা জালের আওতায় আনতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক কর্মী, যেমন : পোলট্রি, ফিশারি, পাশাপাশি বাণিজ্য ও সেবা খাত।

১৩. অনলাইনভিত্তিক অর্থনীতিকেও সহায়তা দিতে হবে। এই খাতকে সহায়তা দিতে ইন্টারনেটের ব্যয় কমানো যেতে পারে, স্মার্টফোনের দাম অনেক সস্তা করা উচিত। একইভাবে, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহের সময় অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেমগুলোকে বাধা দেওয়া উচিত নয়।

লেখক : বিআইডিএসর মহাপরিচালক। রচনাটি লেখকের ফেসবুক পোস্টে দেওয়া ইংরেজি থেকে অনুবাদকৃত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর