শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই

অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মন্ডল

কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কৃষি অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক এম এ সাত্তার মন্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক তান্ডবের ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। তবে দুটি বিষয়ে আমাদের এখন আশ্বস্ত থাকা যায়। এক. দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে, খাদ্যাভাবের সম্ভাবনা নেই। বাজারে যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দাম না বাড়ে, সে ব্যাপারেও সরকারের কঠোর সতর্কবার্তা রয়েছে। দুই. পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা রয়েছে- এক ইঞ্চি জায়গাও অনাবাদি না রাখার আহ্বান। এটা কৃষক, শ্রমিক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, উপকরণ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের উৎসাহী করবে বলে তিনি মনে করেন। এই মুহূর্তে হাওর অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখানে উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা কাজ করে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ফলে এটা চিন্তার বিষয়। এখানে তাদের (শ্রমিকদের) কোনোভাবে যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়া যায় কিনা। তবে তার আগে স্বাস্থ্যের কথাও বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি তারা করোনামুক্ত রয়েছেন সে সনদের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদফতর ও স্থানীয় কাউন্সিলররা সমন্বয় করতে এটা করতে পারেন। তবে আমরা এখন সবাই শুধু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছি। সমাধানের কথা কেউ বলছি না। কেননা সেটা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু সম্ভাব্য সমাধান তো আমাদেরই করতে হবে। তিনি বলেন, এ মাসের শুরুতে বোরো ধানে থোড় আসছে। বোরো ধান প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চালের জোগান দেয়। এখন সেচব্যবস্থা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। প্রায় ১৫ লাখ অগভীর নলকূপ, প্রায় ৩৫ হাজার গভীর নলকূপ ও লক্ষাধিক পাওয়ার পাম্প সচল রাখার জন্য ডিজেল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেচযন্ত্রের মেরামতকাজ নির্বিঘ্ন রাখতে খুচরা যন্ত্রপাতির দোকান চালু রাখা দরকার। হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকায় গ্রামীণ মেকানিকেরা নিয়মিত বসতে পারছেন না। ইউনিয়ন পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্যোগে স্থানীয় মেকানিকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনভিত্তিক  যোগাযোগ  নেটওয়ার্ক গঠন করা যেতে পারে, যাতে কারও সেচযন্ত্র বিকল হলে দ্রুত তাদের সার্ভিস নেওয়া যায়। এ ছাড়া ধান মাড়াইয়ের জন্য সরকার কিছু মেশিনের ব্যবস্থা করেছে। সেটা দিয়ে তো আর পুরো দেশ কভার করা সম্ভব নয়; এ জন্য শ্রমিকরাই তো আসল কাজ করবেন। এ জন্য মে মাসের শুরুতে যখন সারা দেশের বোরো উঠতে শুরু হবে তখনকার চ্যালেঞ্জটা আসল। তখন তো একযোগে সারা দেশেই ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। এ জন্য এখানে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারের ভর্তুকির মাধ্যমে ধান কাটা যন্ত্রপাতি বিতরণের কাজ চলমান আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রের মতে, উপজেলাওয়ারি  কোন মডেলের যন্ত্রের কত চাহিদা আছে, তার ভিত্তিতে কোন উপজেলায় কটা যন্ত্র দেওয়া যাবে, তা কৃষি পুনর্বাসন কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় থেকে এখন ওই সব যন্ত্রপাতি কোন কোন কৃষক পাবেন, তার তালিকাটি চূড়ান্ত করে অধিদফতরে পাঠানো অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়ে কাজটি বিলম্ব হলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কমিটিকে এটাকে অত্যাবশ্যকীয় কাজ হিসেবে তাগিদ দিয়ে দ্রুত কাজটি করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ভর্তুকি মূল্যে যন্ত্র কারা পাবেন, এটা জানা হয়ে গেলে যন্ত্র সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও দ্রুত প্রয়োজনীয় চুক্তিপত্র সম্পাদনের কাজ সেরে ফেলতে হবে। এ কাজটি অবিলম্বে শেষ করার বড় সুবিধা হলো যারা ভর্তুকি সুবিধা পাবেন না, তারা আর ওই আশায় বসে না  থেকে বাজারমূল্যেই হার্ভেস্টার ও রিপার কিনতে এগিয়ে আসবেন। ভর্তুকি সিদ্ধান্তে বিলম্ব মানেই সম্ভাব্য কৃষিযন্ত্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের আশা-নিরাশার  দোলাচলে ফেলে রাখা। এটা মোটেই কাম্য নয়। ফসল খাতের বাইরে দুগ্ধ খাত করোনার প্রভাবে ইতিমধ্যেই বিপাকে পড়েছে। ছোট-বড় সব দুগ্ধ খামারি প্রমাদ গুনছেন। না পারছেন দুধ দোহন বন্ধ করতে, না পারছেন কাঁচা দুধ বিক্রি করতে। অথচ গাভীকে খাওয়ানো ও চিকিৎসা সবই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। করোনার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে দুগ্ধ খামারিদের আর্থিক সহায়তাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। দুধ কোম্পানি, খামারি ও বিজ্ঞানীরা মিলে এ পরিস্থিতিতে দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ বা গুঁড়া দুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ের উপায় নির্ধারণে প্রচেষ্টা নিতে পারেন।

সর্বশেষ খবর