শিরোনাম
শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ওষুধের চেষ্টায় বাংলাদেশও

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওষুধের চেষ্টায় বাংলাদেশও

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোনো টিকা বা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার না হলেও রোগ প্রতিকারের জন্য ওষুধ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছে বাংলাদেশও। ইতিমধ্যে বিশ্বেও নানান প্রান্তে এসব ওষুধ প্রয়োগে সফলতাও এসেছে তা নিয়ে গবেষণা চলছে বাংলাদেশে। যেসব গোত্রের ওষুধে আশার আলো দেখা যাচ্ছে তার উৎপাদন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকেও কয়েকটি ওষুধের স্টক বাড়ানোর আদেশও দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে চলতে থাকা ওষুধগুলো নিয়ে গবেষণা ও উৎপাদনে কাজ করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিকে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়া জ্বরে ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন কার্যকর বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা। সোসাইটি করোনা রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার এরই মধ্যে এক লাখ রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার মতো ওষুধ মজুদ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সব মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে তাতেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কয়েক লাখ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কার্যকর ওষুধের মজুদ ও সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, যুক্তরাষ্ট্রের  ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (ইউএসএফডিএ) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার অনুমোদন করেছে। চীন ও ফ্রান্সের ওষুধ উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ওষুধটি ব্যবহার করেছে। ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি যারা ক্রমাগত রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন বা সেবা দিচ্ছেন, তাদের প্রতিরোধক হিসেবে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ বিল্লাল আলম জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়া জ্বরে ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইনের সঙ্গে এজিথ্রোমাইসিন সাত দিন সেবনে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর চিকিৎসা পদ্ধতি এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে দেশে করোনা আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে ‘স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন’ দিয়েছে। ওই সুপারিশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইনের সঙ্গে এজিথ্রোমাইসিন সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই গাইডলাইন অনুসরণ করে সারা দেশের চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের একই ধরনের চিকিৎসা সেবা দেবেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ইনসেপ্টা ও ডেল্টা নামে দুটি ওষুধ কোম্পানি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদন করে থাকে। ইনসেপ্টা রিকোনিল নামে এবং ডেল্টা রিউমাফ্লেক্স নামে ওষুধটি বাজারজাত করে থাকে। এই দুটি ওষুধ কোম্পানি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বিদেশেও রপ্তানি করে থাকে। এরবাইরে এসিআই, জেসন, রেডিয়েন্ট ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যালেরিয়া জ্বরের ওষুধ উৎপাদন করে। দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে চিকিৎসাসেবা যেন ব্যাহত না হয় সেজন্য এর বাইরে বেক্সিমকো, স্কয়ার ফার্মা, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ দুটি ওষুধ উৎপাদন শুরু করেছে বা প্রস্তুতি নিয়েছে। এজিথ্রোমাইসিন নামক একটি অ্যান্টিবায়োটিক করোনা চিকিৎসায় বেশ কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এই অ্যান্টিবায়োটিকের উৎপাদন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে, বর্তমান সময়ে আরেকটি আলোচিত ওষুধ ফ্যাভিপিরাভির। এই ওষুধটি জাপানি কোম্পানি ফুজির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিকেল তৈরি করেছিল ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য। গত শনিবার ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ঝ্যাং জিনমিন বলেছেন, দেশটির দুটি মেডিকেল ইনস্টিটিউশন ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগ করে দেখেছে, এটি করোনাভাইরাসজনিত কিছু লক্ষণ কমাতে কার্যকর। জাপানে ফুজির তৈরি ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটির ব্র্যান্ড নাম অ্যাভিগান। এটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে পারে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে জাপান। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ফ্যাভিপিরাভির তৈরি করেছে  বীকন ফার্মা। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে জমাও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন আক্রান্তদের ওপর প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেলে ওষুধটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। এ ছাড়া বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেফ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসকে, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদি কোম্পানিও ওষুধটির উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর