শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বুড়িমারী স্থলবন্দরে লকডাউনে ৬১ ভারতীয় ট্রাকড্রাইভার

ফেরত নেওয়ার অনুরোধ বাংলাদেশের, বাধা দিচ্ছে রাজ্য সরকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে এসে সেগুলো খালাসের পর আর নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেননি ৬১ জন ভারতীয় ট্রাকড্রাইভার। এক সপ্তাহ ধরে তারা বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকা পড়ে আছেন।

এসব ট্রাকড্রাইভার ফেরত নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত এক সপ্তাহেও তাদের ফেরত নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি এখন এমন অবস্থায় গেছে যে, বাংলাদেশ সরকার দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও আটকেপড়া ড্রাইভারদের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্র্তৃপক্ষকে। তারা বিষয়টি কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় দিল্লিকে অবহিত করেছেন। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে দেশটির জেলা প্রশাসনকেও অনুরোধ জানিয়েছে। রাজশাহী এবং ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও পার্শ্ববর্তী দেশটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে কোনোভাবেই এসব ট্রাকড্রাইভারকে ফেরত নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সার্ক দেশগুলোর ট্রেড অফিশিয়ালদের মধ্যে যে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়, সে কনফারেন্সেও আটকে পড়া ট্রাকড্রাইভারদের ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা সেদিনের কনফারেন্সে ১ নম্বর এজেন্ডায় রেখেছিলাম ভারতীয় চালকদের ফেরত নেওয়ার ইস্যুটিকে। তারা (ভারত) আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, পরদিনই তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবেন। কিন্তু এরপরও তিন দিন চলে গেছে।

কীভাবে আটকা পড়লেন এসব ট্রাকড্রাইভার : ৬১ ট্রাকড্রাইভার আটকা পড়ার ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে বুড়িমারী স্থলবন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম ভুঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি জানান, এসব ট্রাকড্রাইভার গত শনিবার (৪ এপ্রিল) ভারত থেকে ১৪০০ মেট্রিকটন পাটবীজ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুততার সঙ্গে এসব পণ্য খালাস করা হয় এবং সেদিনই তারা ফেরত যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু সীমান্তে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসন তাদের আটকে দেয়। এরপর ট্রাকড্রাইভাররা বন্দরে ফেরত এসে আমাদের অবহিত করে যে, তাদের দেশের প্রশাসন ঢুকতে দিচ্ছে না। স্থল বন্দরের উপপরিচালক জানান, এসব পাটবীজ বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে ভারত। গত মার্চ থেকেই বীজগুলো সীমান্তের ওপারে আটকা ছিল। এদিকে বীজ রোপণের মৌসুম চলে যাচ্ছে। এপ্রিলের পর আর এসব বীজ কোনো কাজে লাগবে না। ফলে সময়মতো পণ্য না পেলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এলসি বাতিল করতে পারে। এ অবস্থায় ভারত ট্রাকে লোড করা পাটবীজগুলো আমদানিকারকদের হাতে পৌঁছানোর জন্য গত শনিবার সকালে ট্রাকড্রাইভারদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়। কিন্তু এরপর তাদের আর ফেরত নেয়নি।

মাহফুজুল ইসলাম ভুঞা জানান, আটকেপড়া ট্রাকড্রাইভারদের আত্মীয়-স্বজনরা সীমান্তের ওপারে জোর দাবি জানাচ্ছেন তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে। তারা সড়ক অবরোধ করছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এমনকি বিএসএফ’র পক্ষ থেকেও কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তারা নিতে রাজি। কিন্তু বাধা আসছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের স্থানীয় প্রশাসন থেকে। এ অবস্থায় ভারতীয় চালকদের ফেরত নিতে আমাদের লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপরও তাদের ফেরত নেওয়া হয়নি। স্থল বন্দরের এই কর্মকর্তা বলেন, কূটনৈতিক প্রক্রিয়াতেও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রাজশাহীতে ভারতীয় হাইকমিশনের অ্যাসিসট্যান্ট হাইকমিশনার, ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। নিজ দেশের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এখন দেখি কবে তাদের ফেরত নেওয়া হয়।  

আটকেপড়া ট্রাকড্রাইভারদের খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কীভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে- জানতে চাইলে স্থলবন্দরের উপপরিচালক জানান, এ ব্যাপারে অফিশিয়ালি কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও তারা কোনো সহায়তা পাননি। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ৬১ জন ড্রাইভারকে তিনবেলা খাবার দিচ্ছেন। তাদের লুঙ্গি, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া তারা যাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে মিশে কোনো ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রমণে না পড়েন, সেজন্য তাদের বন্দর এলাকায় লকডাউন করে রাখা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর