শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

নিরাপদ সবজি গ্রাম ‘পারেরটং’

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

নিরাপদ সবজি গ্রাম ‘পারেরটং’

পিচঢালা রাস্তা ছেড়েই গ্রামের মেঠো পথ। এই পথ ধরে যতই গ্রামের ভিতরে এগোনো যায় রাস্তার দুই পাশে শুধু সবজি আর সবজি। নানা জাতের সবজিতে ভরে আছে পুরো গ্রাম। শুধু জমিতেই নয়, গ্রামের কৃষকদের বাড়ির আঙিনায়, ঘরের চালে, গাছে গাছে ঝুলে আছে নানা জাতের সবজি। গ্রামের সবাই ব্যস্ত সবজিখেতে। কেউ গাছের গোড়ায় নিরানি দিচ্ছেন, কেউ বা চাষের জমি তৈরি করছেন, কেউ বসে আছেন সেচযন্ত্র চালিয়ে। এমন দৃশ্য শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের ‘পারেরটং’ নিরাপদ সবজি গ্রামের। গ্রামের প্রবেশমুখ থেকেই নামের সঙ্গে চমৎকার মিল পাওয়া যায়। শহর থেকে এ গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। সরেজমিন সবজি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা মাঠের পর মাঠ করলা, চিচিংগা, চালকুমড়া, ঝিঙা, টমেটো, বেগুন, লাউ, শসা, সিম, লাল শাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। এক সপ্তাহ পরই এসব গাছে সবজি ধরা শুরু হবে। আর সবজি বিক্রির জন্য গ্রামের নতুন বীজ এলাকায় পারেরটং কালেকশন পয়েন্ট নামে একটি পাইকারি সবজি বাজার খোলা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা-১০টা এখানে বাজার বসে। উপজেলার ছোট-বড় বাজার ছাড়াও ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও মৌলভীবাজারের পাইকাররা এখান থেকে গাড়িবোঝাই করে সবজি কিনে নেন। প্রতিদিন ৫০-৬০ মণ সবজি বাজারে ওঠে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পারেরটং গ্রামে ৫৭ পরিবারের বাস। এ পরিবারগুলো সবজি চাষের ওপর নির্ভরশীল। বংশ পরম্পরায় ৩০-৩৫ বছর ধরে তারা সবজি চাষ করছেন। গ্রামে ২৬২ বিঘা জমিতে সবজি চাষ হয়। তবে ২০১৩ সালে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এ গ্রামকে নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রথম বছর ২০ জন কৃষককে দিয়ে ৬০ বিঘা জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু হয়। বর্তমানে ৫৫ জন কৃষক ২৬২ বিঘা জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। নিরাপদ সবজি চাষের জন্য কৃষকদের পরিবেশবান্ধব কৌশল শিখিয়ে দিতে গ্রামে একটি ‘কৃষক মাঠ স্কুল’ খোলা হয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস থেকেও নতুন নতুন সবজির প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হচ্ছে এ গ্রামে। চলতি মৌসুমে সরিষা, ভুট্টা, সূর্যমুখী ও ব্রকলি চাষ করা হয়েছে। কৃষক মো. নাজমুল হাসান বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য এখন তারা জমিতে জৈবসার, গোবর, জৈব বালাইনাশক, সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ, হলুদ ট্র্যাপ ও  বিষটোপ ব্যবহার করেন। আগে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতেন। কৃষক হারুনুর রশিদের দাবি গ্রামের সবজি বাজারে যেন একটা লাইটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া পারেরটং-খলিলপুরের রাস্তাটি পাকা করে দিলে জমিতে মালামাল আনা নেওয়ার সুবিধা হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, গ্রামের সব জমিই আমরা নিরাপদ সবজি চাষের আওতায় নিয়ে আসব, এ চিন্তা আমাদের রয়েছে। এ ছাড়া সব জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হবে।  কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হবে না। তা ছাড়া রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, আশা করি আগামী বছর থেকে আমরা এ গ্রামের নিরাপদ সবজি রপ্তানি করতে পারব।

সর্বশেষ খবর