বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনাভাইরাস শনাক্ত

ঢাকার আল ইনসাফ চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় দেশে একাধিক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকায় মগবাজারের ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকসহ নয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। চার চিকিৎসক ও দুজন নার্স ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ায় আংশিক বন্ধ করা হয়েছে ঢাকার তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতাল। এ ছাড়া  রোগীর নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ায় আংশিক বন্ধ করা হয়েছে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতাল। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রশাসনের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ নিজেদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার নামে বিনা নোটিসে বন্ধ ঘোষণা করতে পারবে না। এ ধরনের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের লকডাউনের সিদ্ধান্ত তদন্ত করে দেখা জানা যায়, চিকিৎসকসহ নয়জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ঢাকার ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার মগবাজারের ওই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ নয়জনের দেহে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর গত মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের জনতথ্য শাখার নির্বাহী মো. শরফুল ইসলাম। তিনি বলেন, রোগীরা সবাই চলে গেছেন। হাসপাতালের সব কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বন্ধ হওয়ার আগে ১৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালের অন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা কীভাবে আক্রান্ত হলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারাও ঠিক বলতে পারছেন না। তবে দুই সপ্তাহ আগে করোনা সন্দেহজনক একজন রোগী আমাদের জরুরি বিভাগে এসেছিলেন। তাকে যারা চিকিৎসা দিয়েছেন, সেই চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফরাই আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য আমাদের ধারণা, ওই রোগীর মাধ্যমেই তারা সংক্রমিত হয়েছেন।

তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতাল আংশিক বন্ধ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক চিকিৎসক ঢাকার তেজগাঁওয়ের বেসরকারি ইমপালস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্ব এড়ানোর অভিযোগ করেছিলেন, সেই হাসপাতালের আরও তিন চিকিৎসক ও দুজন নার্সও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাতে এই তথ্য জানিয়ে হাসপাতালের সার্জারি ও গাইনি বিভাগের ৪০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো এবং বিভাগ দুটি বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই নারী চিকিৎসক অভিযোগ করেন, হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পেয়ে তারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা বিষয়টি পাত্তা না দেওয়ায় কোনো ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়।

চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতাল আংশিক বন্ধ : চিকিৎসা নেওয়া এক রোগীর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের সিসিইউ এবং জেনারেল ওয়ার্ডের আংশিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে আসা ওই রোগী হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে চলে গেছেন নমুনা পরীক্ষার ফল আসার আগেই। গত মঙ্গলবার ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এ নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রাম জেলার যে ১১ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় তাদের মধ্যে একজন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ম্যাক্স হাসপাতালের সিসিইউ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেনারেল ওয়ার্ডের একাংশও বন্ধ করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে হাসপাতালের করোনায় আক্রান্ত ১২ : নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা হাসপাতালের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, নার্সসহ ১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শহরের খানপুর এলাকার এ হাসপাতালটি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত। গতকাল বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৩০০ শয্যা হাসপাতালের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, নার্সসহ ১২ জনের নমুনা ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া ১২ জনকে হাসপাতালেই আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এই হাসপাতালের তিন চিকিৎসকসহ এ পর্যন্ত ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। আর পুরো জেলায় পাঁচজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তারা আইসোলেশনে আছেন।

সর্বশেষ খবর