বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সৌদি থেকে ফিরছেন ৩৬৬ বাংলাদেশি

নেপাল থেকে ফিরল ১৩ জন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ৩৬৬ বাংলাদেশি। এর মধ্যে ১৩২ জন ওমরাহ করতে গিয়ে সৌদি আরবে আটকা পড়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকের ফিরতি টিকিট কেনা ছিল। অন্য ২৩৪ জন সৌদি আরবে বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে আটক ছিলেন। মুক্ত হওয়ার পর তাদের সৌদি সরকার নিজ খরচে দেশে পাঠাচ্ছে।  গতকাল বিকালে তাদের নিয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের বিশেষ বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। মঙ্গলবার হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘পররাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হাবের পক্ষ থেকে ওমরাহ যাত্রীদের আসতে দেওয়ার জন্য সৌদি সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। ওমরাহ যাত্রীরা ১৪-১৫ মার্চ ঢাকা থেকে সৌদি যান। ওমরাহ শেষ করে তারা দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। সেই সঙ্গে সৌদি সরকার সেখানে জেলে বন্দী থাকা ২৩৪ বাংলাদেশিকেও পাঠিয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের ইনচার্জ ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, সৌদি ফেরত ৩৬৬ জন ঢাকায় আসার পর সবাইকে করোনা পরীক্ষা করে হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বেবিচক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তাদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

দেশে ফেরার অপেক্ষায় ১৫ নারী গৃহকর্মী : দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন কাজের ভিসা নিয়ে সৌদিতে এসে নানা কারণে বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের সেফহোমে আশ্রয় নেওয়া ১৫৪ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী। এ ছাড়া সৌদি আরবের বিভিন্ন মর্গে থাকা বাংলাদেশি কর্মীদের মরদেহ স্থানীয়ভাবে দাফন করার জন্য বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর মো. মেহেদী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বর্তমানে আমাদের সেফহোমে ১৫৪ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী রয়েছেন। অনেক আগে থেকেই তাদের দেশে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছিল। আমাদের অনুরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেফহোমে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙ্গুলে ছাপ) নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, সব আইনি জটিলতা কাটিয়ে ১৩৫ জনের ফাইনাল এক্সিট ভিসা পাওয়া গেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ আছে। বিশেষ ফ্লাইটের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ফ্লাইট শিডিউল পাওয়া গেলে ১৩৫ জনকে দেশে পাঠাতে কোনো আইনি বাধা নেই। দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে (দূতাবাসের অধীক্ষেত্র) স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী ৫০-এর বেশি বাংলাদেশি কর্মীর লাশ বিভিন্ন মর্গে রয়েছে। এই লাশগুলো স্থানীয়ভাবে দাফনের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বার বার তাগিদ দিচ্ছে। মৃত প্রবাসীর পরিবারের সম্মতি না পেলে স্থানীয়ভাবে দাফন করা সম্ভব নয়। এই আইনসহায়তাকারী বলেন, মৃতদের পরিবার থেকে স্থানীয়ভাবে দাফনের অনুমতি দিলে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে মৃতদেহ দাফন করা হয়। যেহেতু এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হওয়া ফ্লাইট কবে চালু হবে সেটা অনিশ্চিত। সেহেতু দীর্ঘদিন মরদেহ মর্গে ফেলে না রেখে স্থানীয়ভাবে দাফন করে ফেলাই শরিয়ত সম্মত বলে মনে করেন তিনি। শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর মেহেদী হাসান বলেন, মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবার স্থানীয়ভাবে মরদেহ দাফনের আবেদন করলে আমরা দ্রুত অনাপত্তিপত্র দিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করি।

নেপাল থেকে ফিরলেন ১৩ বাংলাদেশি : করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ১৩ জন বাংলাদেশি একটি বিশেষ বিমানে দেশে ফিরেছেন। যদিও ঝুঁকি এড়াতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিমানবন্দরগুলোয় চীন ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে যাত্রী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নেপালের বুদ্ধা এয়ারলাইনসের বিশেষ একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ১৩ জন বাংলাদেশি। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করে। নেপালফেরত যাত্রীদের মধ্যে ১১ জনকে আশকোনা হজক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। বিমানবন্দরের থারমাল পরীক্ষায় এ যাত্রীদের দেহে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। বেবিচকসূত্র জানান, ফেরত আসা ১৩ জন যাত্রী প্রায় এক মাস আগে ভ্রমণসহ প্রয়োজনীয় কাজে নেপাল যান। এই সময়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে পরপর তিনবার নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণ করায় তারা সেখানে আটকে পড়েন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা দেশে ফেরেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, সরকারি অনুমতির মাধ্যমেই যাত্রীবাহী বিমানটিকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর