শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

অর্থনীতি সামলাতে নতুন টাকা ছাপানোর চিন্তা

পিছিয়ে যেতে পারে বাজেট ঘোষণা

মানিক মুনতাসির

বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়িয়ে অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। শিল্প, কৃষি, এসএমইসহ সার্বিক অর্থনীতির ধস ঠেকাতে ইতিমধ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর বাইরে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকাসহ আরও ৩০ হাজার কোটি টাকার কয়েকটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকার প্রয়োজন হবে। যার সিংহভাগই মেটাতে হবে ব্যাংক খাত থেকে। এমনিতেই ব্যাংক খাতে কিছুটা তারল্য ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য ব্যাংক খাতে তারল্য বাড়াতে ইতিমধ্যে সিআরআর, এসএলআর কমানো হয়েছে।

জানা গেছে, বাজারে কী পরিমাণ টাকা রয়েছে। আর কী পরিমাণ টাকার সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। ধাপে ধাপে নাকি একবারে সরবরাহ বাড়ানো হবে। পরবর্তীতে অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে কিনা-এসব বিষয় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থবিভাগ এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। খুব শিগগিরই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ। বাজেট আইন বা অর্থবিল অনুযায়ী আমাদের অর্থবছর শুরু হয় প্রতি বছর জুলাই মাসে আর শেষ হয় জুন মাসে। সে অনুযায়ী প্রতি বছর জুনের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী এবং তা পাস করা হয় জুন মাসের একেবারে শেষের দিকে। যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১ জুলাই থেকে।

এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই ছুটি আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে। এ জন্য বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি বাধার মুখে পড়েছে। সব ধরনের প্রাক বাজেট আলোচনাও বন্ধ রয়েছে। শুধু ই-নথির মাধ্যমে অনলাইনে অতি জরুরি কিছু কাজ করছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। একই প্রক্রিয়ায় দৈনন্দিন জরুরি কিছু ফাইলপত্র দেখছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থবিভাগের সূত্রমতে, এবার বাজেট ঘোষণা দুই মাস পিছিয়ে আগস্টে হতে পারে। তবে এটা চূড়ান্ত নয়। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। যা ইতিমধ্যে চাওয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট ঘোষণা না পেছানোর পক্ষে মত দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, এখনই এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা নয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলতি মাসের শেষের দিকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যা গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের বাজেটের প্রথম ৮ মাসের বাস্তবায়ন হার বেশ ভালো। তবে শেষ চার মাস মার্চ-জুন করোনাভাইরাসের কারণে বাধার মুখে পড়েছে। প্রায় সব ধরনের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে সরকারের পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। যা মূলত অনুন্নয়ন খাতের ব্যয় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে চলতি মাসের শেষের দিকে বাজেট ঘোষণা পেছানোর বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। একই সঙ্গে মুদ্রাবাজারে টাকার সরবরাহ বাড়াতে নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার বিষয়েও খুবই শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর