সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

খাদ্য সংকটে ঢাকার আড়াই হাজার বানর

মোস্তফা কাজল

খাদ্য সংকটে ঢাকার আড়াই হাজার বানর

খাদ্য সংকটে পড়েছে মেগা সিটি দুই ঢাকার প্রায় আড়াই হাজার বানর। এসব প্রাণীর দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে সরকার ঘোষিত অবরোধ। বন্ধ অফিস-আদালত, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ রয়েছে রাজধানীর দুই সিটির প্রায় ২২ হাজার খাবার হোটেল। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির মেলবন্ধন নতুন ও পুরান ঢাকা। ঢাকার ঐতিহ্যের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ এখানে বসবাসরত বানর। বাংলাদেশ প্রাণী জরিপ দফতরের তথ্যমতে, রাজধানীর দুই সিটিতে উন্মুক্ত অবস্থায় প্রায় আড়াই হাজার বানর রয়েছে। সরকারি এ সংস্থার জরিপ থেকে দেখা যায়, দিন দিন ঢাকায় বানরের সংখ্যা বাড়ছে। অবিভক্ত ঢাকায় একসময় গাছপালা, জঙ্গল, নদী-নালা ও খালের কারণে এ অঞ্চলে ছিল বানরসহ অনেক প্রাণীর বসবাস। তবে নগরের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একে একে এসব প্রাণীর অধিকাংশই হারিয়ে যেতে থাকে। এর মধ্যে নতুন ও পুরান ঢাকার উল্লেখযোগ্য বানর এখনো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তবে বসবাসের স্থান ও সাম্প্রতিক তীব্র খাদ্যাভাবের কারণে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, নতুন ঢাকা ও পুরান ঢাকায় বসবাসরত বানর প্রজাতির নাম  রেসাস ম্যাকাস। প্রায় ১০০ বছরের  বেশি সময় ধরে রয়েছে এসব বানর। নতুন ঢাকার মধ্যে মিরপুর, বনানী, গুলশান, বারিধারা, উত্তরা এবং পুরান ঢাকার ওয়ারী, বনগ্রাম, সুরিটোলা, কলতাবাজার, শাঁখারীবাজার, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, রাধিকা বসাক লেন, মিলব্যারাক, স্বামীবাগ এলাকায় এসব বানরের  দেখা মেলে। ১৯১৪ সালে গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডে অবস্থিত সাধনা চত্বরে বানরের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড.  যোগেশ চন্দ্র ঘোষ। সেই সঙ্গে বানরের জন্য সকাল-বিকাল খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। জানা গেছে, সাধনা ঔষধালয় ও পাশের সূত্রাপুর মহল্লার পঞ্চায়েত কবরস্থানে হাতে গোনা কয়েকটি বানরের দেখা মেলে। কয়েক মাস আগেও প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক বানরের দেখা মিলত। বর্তমানে করোনার প্রভাবে খাবার ও বাসস্থানের অভাবে এসব বানর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কিছুদিন কয়েকজন ব্যক্তির উদ্যোগে খাবার দেওয়া হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আলিফ ইসলাম বলেন, বর্তমানে খাবার সংকটের কারণে বানর মানুষের বাসাবাড়ির খাবার নিয়ে যায়। অনেকে অভুক্ত থাকছে। ফলে খাবার না পেয়ে মানুষকে কামড় দেয়। এতে বিরক্ত হয়ে মানুষ বানরকে মারতেও উদ্যত হয়। এ ছাড়া এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে ও বিদ্যুৎস্পর্শে বানর মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। পুরান ঢাকার বিলুপ্তপ্রায় বানর রক্ষা, নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র নিশ্চিত ও সিটি করপোরেশন কর্তৃক খাবার সরবরাহের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে ঢাকা ইয়ুথ ক্লাব ইন্টারন্যাশন্যাল। তারা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের তীব্র সংকট থাকায় এসব প্রাণীর দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এসব প্রাণীর জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ মহাজন। তিনি আরও বলেন, সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ঢাকার দুই সিটির বানর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে শহরের ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হাবীবুন নাহার বলেন, সিটি করপোরেশেন বা বন বিভাগ যদি একটি নির্দিষ্ট স্থানে বানরের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে তাহলে বানর  সেখানে আবাস গড়ে তুলবে। পাশাপাশি অভুক্ত থাকবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর