সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা চিকিৎসার উদ্ভাবনে এগিয়ে আসছে তারুণ্য

তৈরি হচ্ছে শনাক্তকরণ কিট, তথ্যের জন্য অ্যাপ এবং চিকিৎসা দিতে রোবট

জিন্নাতুন নূর

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্ভাবনে এগিয়ে আসছেন বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা। দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের শনাক্তকরণ পরীক্ষার কিট স্বল্পতার মধ্যেই এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞানমনস্ক একদল তরুণ ও গবেষক এবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা নিজ মেধা ও সামর্থ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাগারে তৈরি করছেন কভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট। এর পাশাপাশি কেউ কেউ কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের সহযোগিতা করতে তৈরি করেছেন রোবট। কেউ আবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য পেতে তৈরি করছেন মোবাইল অ্যাপও।

জানা যায়, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের ল্যাব এবং টেস্টিং কিট উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানানো হয়।

অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের

করোনাভাইরাস রেসপন্স কমিটি, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ এবং অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই জরুরি সভা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয়  বিশেষজ্ঞ, দক্ষ জনবল ও ল্যাব সুবিধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। তবে এই বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ লোকবলের সর্বোত্তম ব্যবহার করার জন্য একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত অত্যাধুনিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা জরুরি। এই ল্যাব করোনাভাইরাসসহ জাতীয় প্রয়োজনে অন্যান্য যে কোনো ভাইরাস ও অনুজীব শনাক্তকরণ এবং সংশ্লিষ্ট টেস্টিং কিট উদ্ভাবনে ব্যবহৃত হবে। এমনকি ঢাবির এই বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ও গবেষকরা দেশের অন্যত্র একই প্রকৃতির ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও ল্যাব পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম। এরই মধ্যে কভিড-১৯ প্রতিষেধকের কিছু উপাদান তৈরি করা হয়েছে বলেও ঢাবির গবেষকরা দাবি করেন। আর কিটের উপকরণ পেলেই তারা মূল কাজ শুরু করবেন। এ বিষয়ে এখন সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে।

আশার কথা শুনিয়েছেন বেসরকারি সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ প্রকৌশলী। তারা দাবি করেন যে, তাদের স্বল্প মূল্যে তৈরি করা রোবট কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে চিকিৎসকদের সহযোগিতা করতে সক্ষম। বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মেহেদী বলেন, আমাদের তৈরি করা রোবট চিকিৎসক এবং অন্যদের দূরে রেখেই করোনা রোগী এবং তাদের চিকিৎসায় ৬টি জরুরি সেবা দিতে সক্ষম। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চীনাদের মডেল অনুসরণ করে এই রোবট তৈরি করা হয়েছে। জানা যায়, একজন চিকিৎসক, একটি কন্ট্রোল স্টেশনে থেকেই এই রোবটের সাহায্যে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার এবং হাসপাতালে থাকা বেশ কয়েকজন রোগীকে সেবা দিতে পারবেন।   

এ ছাড়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অত্যাধুনিক জিনোম সেন্টারে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্তের যাবতীয় ব্যবস্থা আছে বলে জানিয়েছে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। শুধু কিট ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) আর সরকারি অনুমোদন পেলেই সন্দেহভাজন করোনাভাইরাস আক্রান্তের স্যাম্পল পরীক্ষা করে ফলাফল প্রসেসিং করা সম্ভব বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেন। তাদের মতে, দেশে করোনা শনাক্তের যে কিট আমদানি করা হয়েছে তা দিয়েই যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জনের স্যাম্পল পরীক্ষা করা সম্ভব। যবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য যত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তার সবই আমাদের রয়েছে। রয়েছে দক্ষ জনবল। দেশের এই পরিস্থিতিতে আমাদের জিনোম সেন্টারের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষক ও গবেষক এই কাজে অংশ নিতে প্রস্তুত আছেন।

আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কভিড-১৯ শনাক্তকরণের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বলে দাবি করেছে  বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইউনিট ও কার্ডিওকেয়ার জেনারেল ও স্পেশালাইজড হাসপাতালের একদল গবেষক। গত ২২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ দফতরের ঊর্ধ্বতন সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হাবিব কাজল এমনটি জানান। গবেষক দলটির সদস্যরা জানান, ফুসফুসের বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ণয়ে রেডিওলজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কভিড-১৯ নির্ণয়েও রেডিওলজি তথা ‘চেস্ট রেডিওলজি’ মডেল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব। এই গবেষকরা আরও জানান, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে যে সফটওয়্যারটি রোগীর বুকের এক্সরে এবং ফুসফুসের সিটি স্ক্যানের ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে কভিড-১৯ শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে শতকরা ৯৬ ভাগ সঠিকভাবে কভিড-১৯ রোগ নির্ণয় করা যাবে বলে গবেষকরা দাবি করেন।

এ ছাড়াও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ কভিড-১৯ পরীক্ষার সহজ ও স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি উদ্ভাবনে সাফল্য পেয়েছেন বলে দাবি করেন। আর করোনার আগাম অবস্থা জানার জন্য সফটওয়্যার তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ কাওছার এবং বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস কে ফয়সাল আহমেদ। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও তরুণ গবেষক ড. মুহাম্মদ শাহানুল ইসলাম করোনা সংক্রান্ত সব তথ্য জানতে ‘করোনা অ্যালার্ট’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর