মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

আক্রান্ত হচ্ছেন সম্মুখ যোদ্ধারা

চিকিৎসক ১৭০ পুলিশ ১০০ সাংবাদিক ১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

আক্রান্ত হচ্ছেন সম্মুখ যোদ্ধারা

আক্রান্ত হচ্ছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সম্মুখ যোদ্ধারা। একে একে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে দেশে ১৭০ চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় ১০০ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ১৮ সাংবাদিক করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রশাসনের কমপক্ষে ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরাম (বিডিএফ) জানিয়েছে, দেশের ১৭০ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১৭০ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা এর বাইরে। বিডিএফের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৩ চিকিৎসক। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ জন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮ জন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন। অপরদিকে, ময়মনসিংহ বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত হওয়া ৭ জনের মধ্যে ৬ জন সরকারি হাসপাতালে এবং আরেকজন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। রংপুর বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ জন, খুলনা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ জন, বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ জন এবং সিলেট বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন একজন চিকিৎসক।

করোনায় আক্রান্ত খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) গ্যাস্ট্রোলজি ও শিশু বিভাগের দুই শিক্ষক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। গত ১০ এপ্রিল তারা একই গাড়িতে করে খুলনায় আসেন। তারপর থেকে তারা কলেজের গেস্ট হাউসে অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে অবস্থান করেন। তবে একই গেস্ট হাউসে থাকা কলেজের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গত ১৮ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তড়িঘড়ি করে অন্যদের নমুনা পরীক্ষা করলে গত ১০ এপ্রিল খুলনায় আসা ওই দুই শিক্ষক করোনা শনাক্ত হন। এ নিয়ে তিনজন শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভীতি ছড়িয়েছে। ময়মনসিংহে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে একমাত্র গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চিকিৎসকসহ নয়জন এবং বাকি একজন মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সিনিয়র নার্স। এদিকে রবিবার মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সিনিয়র নার্স কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় ওই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সব সেবাকর্মীর মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই নার্স হাসপাতালে কর্তব্যরত থাকায় এবং শনাক্তের দিন পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকায় এই আতঙ্ক আরও জেঁকে বসেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে। সহকর্মী নার্সদের অনেকেই অজান্তে তার সংস্পর্শে এসেছিল বলে একাধিক চিকিৎসাকর্মী জানিয়েছেন। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রাতে মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার পর এ কথা জানানো হয়। এ নিয়ে চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসক, একজন নার্স, একজন ছাত্রসহ এই প্রতিষ্ঠানের ছয়জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। এ ছাড়া জেলার অপর একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক দম্পতি, একজন ব্রাদার, তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলার কাজে যুক্ত পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আক্রান্ত ৫২ জন পুলিশ সদস্য রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার। তিনি সুস্থ হওয়ার পথে। আক্রান্ত বাকিদের অধিকাংশই কনস্টেবল। আর এদের বড় অংশ ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত। গতকাল গোপালগঞ্জে ৬ পুলিশ সদস্যসহ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে জেলায় ১৬ পুলিশ আক্রান্ত হলেন।

রাজারবাগে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঢাকার রাজারবাগে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য মারা গেছেন। ট্রাফিক পুলিশের এই কনস্টেবল রবিবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজারবাগ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন সোমবার সকালে তার মৃত্যু ঘটে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার জয়দেব চৌধুরী জানান, ওই কনস্টেবলকে অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা করালে করোনাভাইরাস ‘নেগেটিভ’ এসেছিল। মৃত্যুর পর নমুনা ফের আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল আসার পর সে অনুযায়ী দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই পুলিশ সদস্যের লাশ হিমঘরে রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ২০০২ সালে পুলিশে যোগদান করা এই কনস্টেবলের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে রেখে গেছেন। তার শারীরিক বেশ কিছু জটিলতা ছিল।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর