মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা!

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা সংক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমতির দিকে রয়েছে। এর পরও দেশে আদা, রসুন, ছোলা, ডালসহ বেশকিছু আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। আর এই দাম বাড়ার পেছনের দায় পড়েছে গার্মেন্ট মালিকদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, আমদানিকারক ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানের অনেক আগেই নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই তথ্যে দেখা গেছে, যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তার পর্যাপ্ত এলসি করা হয়েছে রোজার আগে। আর এসব পণ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলো পাঠিয়েছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণের কারণে পণ্যের চাহিদাও কম। তার পরও হঠাৎ কেন দাম বাড়ছে- এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি দেশের আমদানিকারকদের সঙ্গেও কথা বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পরই জানা যায়, রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য যথেষ্ট আমদানি হলেও তা চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে আছে। এমনও দেখা গেছে, গত ১০ দিন ধরে পণ্য নিয়ে বন্দরে জাহাজ ভিড়েছে। কিন্তু বন্দরে কনটেইনারজট থাকায় নিত্যপণ্য খালাসের সুযোগই পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ কনটেইনারজট সৃষ্টির পেছনে মূল ভূমিকায় রয়েছেন গার্মেন্ট কারখানার মালিকরা। তারা শত শত কনটেইনারভর্তি পণ্য এনে সেগুলো বন্দর থেকে নিচ্ছেন না। যার কারণে নিত্যপণ্য খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রমজানের আগে কিছু পণ্যের সরবরাহজনিত সংকট দেখা দিয়েছে। দামও বেড়েছে সে কারণে। সূত্রগুলো জানান, পরিস্থিতি সামলাতে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও  বিকেএমইএকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে তারা যাতে দ্রুততর সময়ে কনটেইনার সরিয়ে জট কমানোর উদ্যোগ নেন। ১৬ এপ্রিল এ চিঠি দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে যে কনটেইনারজট সৃষ্টি হয়েছে এর প্রায় অর্ধেকই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর আমদানি করা কনটেইনার। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এসব কনটেইনার খালাস না হওয়ায় বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। যার কারণে আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের কনটেইনার খালাস করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে যাওয়ার আগেই আমরা গার্মেন্ট মালিকদের চিঠিতে বলেছি তাদের কনটেইনারগুলো নিজস্ব ওয়্যারহাউসে সরিয়ে নিতে।’

রাজধানীর শ্যামবাজারের নিত্যপণ্য আমদানিকারক হাফিজুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারজট থাকলেও তখন ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পণ্য আমদানি হয় বলে সংকট বোঝা যায় না। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে এখন স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় সব চাপ পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ফলে এ বন্দরের জট না ছাড়লে নিত্যপণ্যের সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এই আমদানিকারক।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারজট সম্পর্কে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে সরকারি ঘোষিত ছুটি বাড়ায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিচ্ছেন না আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় বন্দরের জট নিরসনে তারা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

জানা গেছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রমের সার্কিট হাউসে বন্দরের কনটেইনারজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। ওই বৈঠকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলভিারি কম হওয়ায় কনটেইনার মজুদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে বর্তমানে ঢাকা আইসিডির ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনার মজুদ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অনুমোদনক্রমে ঢাকা আইসিডির অতিরিক্ত কনটেইনার পানগাঁও আইসিডিতে পাঠানো হয়। সেটিও ইতিমধ্যে কনটেইনারে পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে ঢাকা আইসিডির কনটেইনারগুলোও চট্টগ্রাম বন্দরে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। আর বন্দরে কনটেইনারজটের কারণে নিত্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের কনটেইনার খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সভায় জানায়, বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনার)। এর বিপরীতে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরের অভ্যন্তরে মজুদ কনটেইনারের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ১১৬ টিইইউএস। পণ্য ডেলিভারির এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে জাহাজ থেকে বন্দরে কনটেইনার নামানো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সভায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। শেষে নিত্যপণ্যসহ বন্দরে আসা অন্যান্য জাহাজ খালাসের সুযোগ তৈরি করে দিতে কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়ার জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে অনুরোধ জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিকেএমইএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার পরপরই সংগঠনের সদস্য গার্মেন্ট মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি যার যার কনটেইনার বন্দর থেকে দ্রুত সরিয়ে নিতে। তবে এসব কনটেইনার ডেলিভারি নিতে গেলে কাস্টমসসহ বিভিন্ন দফতর থেকে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হয়। সরকারি ছুটি থাকায় এসব ডকুমেন্ট সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে বলে আমাদের জানিয়েছেন কোনো কোনো গার্মেন্ট মালিক।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর