বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

গাজীপুরে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ

ত্রাণের দাবিতে রাস্তায় বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ

গাজীপুরে গতকাল বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুরে বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় নেমে গতকালও বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষোভকালে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনো নিয়ম-কানুন না মেনে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নেমে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করায় গাজীপুরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলামসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকার ওয়েস্ট লাইন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েক দিন ধরেই মার্চ মাসসহ তাদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। বেতন-ভাতা পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। শ্রমিকরা গতকাল সকালে কারখানার গেটে জড়ো হয়ে বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও মালিক পক্ষের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিক অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিকালে পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে গতকালই (মঙ্গলবার) শ্রমিকদের মোট পাওনাদির আংশিক এবং আগামী ১০ মে অবশিষ্ট পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়।

খাদ্য ও ত্রাণের দাবিতে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ : খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে। খাদ্যাভাবগ্রস্ত বেশকিছু মানুষ সকাল থেকে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। ত্রাণবঞ্চিত অন্য দল কালশী মোড় থেকে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। বেগুনটিলা বস্তির মানুষজনও খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার দাবিতে সাগুফতা মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু কলেজ প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। মিছিলকারী কয়েক ব্যক্তি জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা এখানে ক্ষুধার কাছে হার মেনেছে। এলাকার সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ঘরে বসে বসেই ফেসবুক আর পত্রপত্রিকায় প্রতিদিন খাদ্যসহায়তা প্রদানের মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা অসহ্য! তারা বলেন, ৮ মার্চের পর থেকেই এসব জনপ্রতিনিধি ও নেতা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।

অসহায় দরিদ্র, অনাহারী মানুষকে নিয়ে এসব উপহাসের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মানুষজন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুরের বিভিন্ন বিহারি ক্যাম্পের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ মিছিল করে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় পৌঁছে রাস্তার ওপর বসে পড়েন। আশপাশের মহল্লা থেকেও শত শত লোক এ অবস্থানে যোগ দেন। বিক্ষুব্ধরা বলেন, পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন খুললেই তারা সরকারিভাবে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার নানা খবর দেখতে পান। বলা হচ্ছে, বাড়িঘরেই অবস্থান করুন, ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু এক মাসেও কোনো জনপ্রতিনিধি বা এলাকার কোনো পাতিনেতার চেহারাও দেখতে পাচ্ছেন না তারা। বেলা আড়াইটার দিকে ডিএনসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম মানিক ১০ নম্বর গোলচত্বরে এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা চালান এবং একপর্যায়ে তাদের ওয়াপদা ক্যাম্পের মাঠে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। সেখানেই তাদের খাদ্য ও ত্রাণ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। তখন শত শত লোক ওয়াপদা মাঠে গিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও সেখানে আর কোনো ত্রাণসহায়তা নিয়ে কেউ পৌঁছেনি এমনকি কাউন্সিলর মানিকের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ সময় অসহায় মানুষজনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্র মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে ঢাকার বাইরে রয়েছেন। ত্রাণ দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে তিন-চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখার প্রতিবাদে সন্ধ্যার পর মানুষ আবার রাস্তায় নেমে মিছিল করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর