বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সিমেন্ট শিল্প সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন উদ্যোক্তারা

কারখানাগুলোয় উৎপাদন বন্ধ, ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস সংক্রমণে অন্যান্য খাতের মতো সিমেন্ট শিল্পও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিসিএমএ। মালিকদের এই সংগঠনটি বলেছে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর সিমেন্ট কারখানাগুলোতে ৯০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ। তারপরও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। শতভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর সিমেন্ট খাতে এ পর্যন্ত যত ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে, তাও ব্যবসায়ীদের জন্য বড় বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সিমেন্ট শিল্প রক্ষায় কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর, যা চূড়ান্ত দায় এবং যার হারও বেশি, তা বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছে বিসিএমএ।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বিসিএমএ সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্ট  গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির। তিনি সরকারের কাছে সিমেন্ট শিল্প রক্ষার দাবি জানিয়ে বলেন, সিমেন্ট হলো উন্নয়নের প্রতীক। কোন দেশের উন্নয়ন কেমন হচ্ছে, তা সে দেশের মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায়। এ ছাড়া সিমেন্ট শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখ লাখ নির্মাণ শ্রমিক, কর্মচারী এবং কর্মকর্তা জড়িত। এখন এই শিল্প-কারখানাগুলো চালু রাখা না গেলে, এরা সবাই বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার সিমেন্ট খাতে যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায়, সেটিও ব্যাহত হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যদি গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য কর প্রদানের ক্ষেত্রে আগামী জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিশোধের সুযোগ তৈরি করে দেয়, তাহলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি। বিসিএমএ বলেছে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের যেসব শিল্পখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার মধ্যে সিমেন্ট শিল্পখাত অন্যতম। সরকার ঘোষিত বন্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সিমেন্ট কারখানাগুলোতে ৯০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ হলেও, পরিচালন খরচ কমেনি। অন্যান্য নিয়মিত খরচও প্রতিনিয়ত চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ দেশে ছোট-বড় সব ধরনের নির্মাণকাজ এখন ৯০ শতাংশই বন্ধ। কবে নাগাদ এ অবস্থার পরিবর্তন হবে, স্বাভাবিকভাবেই আমরা কেউই জানি না। তবে ব্যাংক থেকে যে চলতি মূলধন নেওয়া হয়েছে, তার সুদ এবং আসল চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য যে ব্যাংক ঋণ রয়েছে, সে খরচও বাড়ছে। সিমেন্ট শিল্প মালিকদের এই সংগঠনটি বলেছে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে কাঁচামাল নিয়ে আটকে থাকা ৪৯টি মাদার ভেসেলের পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। অথচ কাঁচামাল বহনকারী নৌ জাহাজ একটি নির্ধারিত সময় অর্থাৎ গন্তব্যে আসার চার দিনের আনলোড করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটা না করা হলে উচ্চ হারে বিলম্ব ফি দিতে হবে। সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নৌ আইন অনুযায়ী, সমুদ্রগ্রামী জাহাজগুলোকেও বিলম্বজনিত মোটা অঙ্কের মাশুল দিতে হয়। আর তা দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। এখন এগুলো ঝুলে থাকার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে, যার সমাধান কারও জানা নেই। বিসিএমএ বলেছে, প্রশ্ন হতে পারে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, সেখানে সিমেন্ট খাতও আছে। কিন্তু সেটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং যার প্রয়োজন হবে, তিনি নেবেন। কিন্তু এতে বরং ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যাবে। আবার এত টাকা অতিরিক্ত ঋণ ব্যাংকগুলো কোনোভাবেই দিতে পারবে না। তার কারণ ব্যাংকের যে আমানতের সক্ষমতা রয়েছে, তাও কমে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তারল্য সংকট অবশ্যই তৈরি হবে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি-জিডিপি কমে যাবে। রাজস্ব আহরণ কমে যাবে। ফলে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি হবে। দেশে উৎপাদন এবং আমদানি পর্যায়ে যে রাজস্ব আহরিত হয়, সেখানেই বড় আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর