বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ধস নেমেছে চিংড়িশিল্পে

দিশাহারা খামারি ও ব্যবসায়ীরা

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

ধস নেমেছে চিংড়িশিল্পে

করোনাভাইরাসের প্রভাবে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়িশিল্পে ব্যাপক ধস নেমেছে। কারখানা বন্ধ থাকায় মাছ বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা। স্থানীয় বাজারগুলোতে গলদা ও বাগদা চিংড়ির দরপতন ঘটেছে অস্বাভাবিক হারে। চিংড়ি মাছের পাশাপাশি ভেটকি, টেংরা, পারশে, পাবদা, তেলাপিয়াসহ সব ধরনের সাদা মাছের দাম কমে গেছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী কভিড-১৯-এর কারণে ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি ও কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরার স্থানীয় বাজার ও আড়তগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ১৪০০ টাকা দরের চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। আর ১২০০ টাকা দরের চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে মাছ বিক্রির কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে শুধু সাতক্ষীরা জেলায় মৎস্য খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। চিংড়িশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা খুব দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ মওকুফের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিংড়িচাষি, ব্যবসায়ী ও হ্যাচারির মালিকরা। মৎস্য অধিদফতরের সূত্রমতে, দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় দুই লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। বিদেশে রপ্তানিকৃত চিংড়ির সিংহভাগ উৎপাদিত হয় এ অঞ্চল থেকে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ১০ লাখ মানুষ। গত বছর এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। যুক্তরাজ্যসহ চিংড়ি রপ্তানির দেশগুলোতে সব ধরনের শিপমেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দেশের হিমায়িত কারখানাগুলোর অধিকাংশ বন্ধ থাকাসহ খাদ্য সংকটের কারণে অনেকেই চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে রপ্তানিমুখী এ খাতের উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা জানান, জেলার চাহিদা মিটিয়ে সাতক্ষীরা থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ ট্রাক সাদা মাছ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হতো। করোনার কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় দু-একটি ট্রাক বাইরে যাচ্ছে। তিনি জানান, জেলায় দুই লাখ মৎস্যচাষি রয়েছেন। এর মধ্যে দেড় লাখ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি। আর এর সঙ্গে জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুই লাখ ২৫ হাজার মানুষ নানাভাবে জড়িত। করোনার কারণে মাছের ন্যায়সম্মত বাজারমূল্য না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্যশিল্প। এ অবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন আধানিবিড় প্রকল্পের চিংড়িচাষিরা। প্রথম পর্যায়ে আধানিবিড় চিংড়ি প্রকল্পে ১০টি পুকুর প্রস্তুত করতে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা খরচ হয়। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটে বহু আধানিবিড় চিংড়ি প্রকল্প রয়েছে। এ অবস্থায় তারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে। চিংড়ির দাম অর্ধেকে নেমে আসা, খাদ্য সংকট, বিদ্যুৎ বিল এবং ঘের কর্মচারীদের বেতন নিয়ে চিংড়ি উৎপাদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা। তাই ব্যাংক সুদ মওকুফের পাশাপাশি সরকারকে নতুন করে স্বল্প সুদে চিংড়ি খামারিদের ব্যাংক ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, সাতক্ষীরায় ৮৮ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়।

 এর মধ্যে ৬৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে বাগদা ও ৯ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে গলদা চাষ হয়ে থাকে। এর বাইরে ধান চাষের সঙ্গে সাদা মাছ ও চিংড়ি চাষ হয় ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর সাতক্ষীরায় ৩৯ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর ৪২ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে হুমকির মুখে চিংড়ি শিল্প। এ ভরা মৌসুমে ঘের মালিকরা ঘেরে ঠিকমতো চিংড়ি রেণু ছাড়তে পারেননি। বাজারে মাছের খাদ্য সংকট। চিংড়ি বিক্রিতে দাম কম। সব মিলিয়ে এ জেলায় ঘের, হ্যাচারি ও নার্সারিসহ চিংড়িশিল্পে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর