ত্রাণ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) আরও সাতজন চেয়ারম্যান ও তিনজন ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ গতকাল এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ নিয়ে মোট ৩৫ জন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হলো। তাদের মধ্যে ১৫ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ১৯ জন ইউপি সদস্য এবং একজন জেলা পরিষদ সদস্য রয়েছেন। এদিকে এই বরখাস্তের মধ্যেই সারা দেশে ত্রাণের চাল চুরি অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গতকাল  সাময়িক বরখাস্ত করা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা হলেন- বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউপির মো. নূরে আলম বেপারী, ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউপির মো. মিজানুর রহমান খান, পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউপির মো. মনির রহমান মৃধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউপির শাহ আল শফি আনসারী, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার যশাই ইউপির মো. সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউপির জারজিদ মোল্লা এবং কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরী। সাময়িক বরখাস্ত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যরা হলেন- নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. রফিকুল ইসলাম, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহিউদ্দিন সোহেল এবং একই উপজেলার কেশবপুর ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. লিপি বেগম। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের সময় তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ত্রাণের চাল আত্মসাৎ, জাটকা নিধনে বিরত থাকা জেলেদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল আত্মসাৎ ও কালোবাজারে বিক্রি, সরকারি ত্রাণের চাল ভুয়া মাস্টাররোলে বিতরণ দেখিয়ে আত্মসাৎ, সরকারি ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত চাল নির্ধারিত পরিমাণে প্রদান না করা ও বিধিবহির্ভূতভাবে অন্যদের মধ্যে বিতরণ ইত্যাদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আল শফি আনসারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় এলাকায় অবস্থান না করে বিনা অনুমতিতে বিদেশ গমন করেছেন এবং নেত্রকোনা জেলার গাঁওকান্দিয়া ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ষাঁড়ের লড়াই আয়োজনের মাধ্যমে গণজমায়েত করে জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন। তাদের কয়েকজন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে আছেন। উল্লিখিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দিয়ে সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সময় পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পৃথক কারণ দর্শানোর নোটিশে কেন তাদের চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না এর জবাব সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা  হয়।

রংপুরে ২৭০০ কেজি ত্রাণের চালসহ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার : রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় ২৭০০ কেজি ত্রাণের চালসহ যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম গতকাল বিকালে গ্রেফতার হয়েছেন। উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্র বাজারের একটি চাতাল থেকে এসব চাল উদ্ধার করা হয়। কাউনিয়া থানার ওসি আবদুল আজিজ জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম কর্মহীন দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ করা চাল খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে উপজেলা সদরের তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন রাজেন্দ্র বাজার এলাকায় পুষ্প নামে এক চাতাল মালিকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে সরকারি বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় চাল ভরানোর কাজ চলছিল। তখন পুলিশ দ্রুত ঘটনা স্থলে গিয়ে আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় সরকারি ৩০ কেজি চালের বস্তায় থাকা ২ হাজার ৭৯০ কেজি চাল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউপি সদস্য চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে সরকারি বস্তা পরিবর্তন করার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।