শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সারা দেশে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বাড়াতে যাচ্ছে টিসিবি

► গত বছরের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি পণ্য সংগ্রহ ► আজ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত ► অনিয়ম পেলেই ডিলারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের সাধারণ ছুটির মধ্যেই রোজা শুরু হওয়ায় সারা দেশে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পাশাপাশি পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের জন্য ভর্তুকিমূল্যে পিয়াজ বিক্রির কার্যক্রম নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। আজ থেকেই টিসিবির অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ৩৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি করা হবে।

গতকাল টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাসান জাহাঙ্গীর টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, টিসিবি সাধারণত রমজান মাস সামনে রেখে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রমজান মাস আসন্ন, ফলে মানুষজনের মধ্যে পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মানুষজন ঘর থেকে বেরোতে পারছে না। আবার কাজকর্ম না থাকায় মানুষের আয়ও কমেছে। সে কারণেই টিসিবির পণ্যের ওপর মানুষের

 নির্ভরশীলতা বেড়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে এবার ট্রাকসেলের সংখ্যা বেড়েছে। তারপরও প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে পণ্য কিনতে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। প্রতিদিন শত শত মানুষ টিসিবির পণ্য কিনতে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাকসেল  আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভোক্তা সাধারণ। এ বিষয়ে টিসিবির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করি, তখন সারা দেশে ২০০ থেকে ২৫০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। রাজধানীর ৫০টি পয়েন্টে ট্রাকসেল শুরু হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেটি বাড়িয়ে সারা দেশে এখন সাড়ে চারশ কেন্দ্রে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে ট্রাকসেল বাড়িয়ে ১০০-এর ওপরে নেওয়া হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ১০৪টি পয়েন্টে ট্রাকসেল হয়েছে। আমরা টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও ৫০টি বাড়িয়ে ৫০০টি কেন্দ্রে টিসিবির পণ্য বিক্রি হবে। এরপরও যদি প্রয়োজন হয় কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। পণ্য বিক্রির কার্যক্রম বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় পণ্যের সংগ্রহ ও মজুদের পরিমাণও বাড়াতে হবে। টিসিবির কি সেই সামর্থ্য আছে? এ প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, আগের বছরগুলোতে টিসিবি যে পরিসরে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল, এবার তার চেয়ে অনেক বেশি পণ্য নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। কোনো কোনো পণ্য আগের বছরের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ গুণ বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। যেমন- গত বছর মাত্র আড়াই হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল ছিল, এবার ৫০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল সংগ্রহ হয়েছে। গতবার ৫ হাজার মেট্রিক টন চিনির স্থলে এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টন এবং আগেরবার যেখানে দেড় হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ছিল এবার সেটি বাড়িয়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন পিয়াজ বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পণ্য সংগ্রহের বিপরীতে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার মতো ভর্তুকি প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান তিনি।

সারা দেশে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে অভিযোগের পরিমাণ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খাটের নিচে পাওয়া যাচ্ছে ভোজ্যতেলের বোতল। নদীতে ভাসছে খালি তেলের বোতল। টিসিবির চেয়ারম্যান বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তার সংস্থা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। যখনই যে ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অভিযুক্তকে আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। টিসিবির নীতি অনুযায়ী ডিলারশিপ ও জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান জানান, পণ্য বিক্রির কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা বিভাগীয় শহরগুলো ছাড়াও কুমিল্লা, বগুড়া, ঝিনাইদহ এবং মাদারীপুরে নতুন করে চারটি ক্যাম্প অফিস স্থাপন করেছেন। এসব ক্যাম্প অফিসের কারণে এখন সারা দেশের প্রতিটি জেলায় দ্রুত পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, আগে কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের এলাকার পয়েন্টগুলোতে সিলেট অথবা চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিতে হতো; এখন কুমিল্লায় ক্যাম্প অফিস হওয়ায় দ্রুত সময়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। টিসিবির সংগৃহীত পণ্য মজুদের বিষয়ে চেয়ারম্যান জানান, রাজধানীতে ১০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার টিসিবির মাত্র দুটি গুদাম রয়েছে। একটি তেজগাঁও এবং অন্যটি গুলশান লিঙ্করোডে। ফলে সংগৃহীত পণ্য মজুদ করতে গিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, অন্য পণ্য মজুদ করা গেলেও তেল মজুদ করতে ১০ গুণ বেশি জায়গা লাগে। এ অবস্থায় আমরা প্রতিদিন পণ্য একদিকে গুদামে ভরছি, অন্যদিক দিয়ে বিক্রির জন্য ডিলারদের ট্রাকে তুলে দিচ্ছি।

টিসিবির চেয়ারম্যান জানান, এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে গুদামের পাশাপাশি তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে জনবল সংকট নিয়ে। তিনি বলেন, আগের সরকারগুলো দুই দফায় গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে টিসিবির জনবল কমিয়েছে। বর্তমান সরকার কিছু বাড়ালেও আরও জনবল দরকার। সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এখন যে পরিমাণ জনবল রয়েছে তা দিয়ে দুই শিফটে রাতদিন কাজ করে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চেয়ারম্যান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গোডাউন থেকে ট্রাকে পণ্য দিতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় থাকলেও এসব কার্যক্রমে সম্পৃক্ত জনবল গুদামেই রাতযাপন করছেন। তারা বাসায় যেতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে ভোক্তার হাতে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য বিক্রির যে কার্যক্রম চলছে এটিকে নিছক সরকারি কার্যক্রম না বলে ‘জনসেবা’ হিসেবেই উল্লেখ করলেন টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাসান জাহাঙ্গীর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর