শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

মহামারীতেও নারীর প্রতি সহিংসতা

২৫৮ ধর্ষণ, স্বামীর নির্যাতনে ৪৩ জনের মৃত্যু ► রাজধানীতেই ১০ দিনে ২৮ মামলা

জিন্নাতুন নূর

মহামারীতেও নারীর প্রতি সহিংসতা

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও দেশে থেমে নেই নারী নির্যাতন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘরবন্দী অবস্থায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও এই সময়ে বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধির দাবি করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিবারবেষ্টিত থাকায় নারীদের পক্ষে তাদের ওপর হওয়া সহিংসতার ঘটনা অন্যদের জানানো বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নারী নির্যাতনের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই ধর্ষণ ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা। করোনার এই ভয়াবহতার মধ্যেও গত ১৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় ১৬ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর আগে ১৫ এপ্রিল ফেনীতে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন টুটুল ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি।

ঢাকার সিএমএম আদালতের তথ্যমতে, মার্চের শেষ ১০ দিনে শুধু ঢাকা মহানগরীতে ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও অপহরণের ২৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি ধর্ষণের মামলা। আর যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৮টি। এর বাইরে যৌন নিপীড়নের অপরাধে মামলা হয়েছে ৬টি। অপহরণের মামলা ৫টি। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ৩৭ জন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু মার্চেই বগুড়া, জামালপুর ও কক্সবাজার জেলায় ৩৬টি ধর্ষণ ঘটেছে। এ ছাড়া একই সময়ে এ তিন জেলায় ৩ শতাধিক পারিবারিক নির্যাতন ঘটে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রাপ্ত তথ্যে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট ২৫৭ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ১২ জনের। ধর্ষণ শেষে চারজন আত্মহত্যা করেন। যৌন হয়রানির শিকার হন ৪৬ জন। এজন্য আত্মহত্যা করেন পাঁচজন। এই সময়ে ৪২ নারীর মৃত্যু হয় স্বামীর নির্যাতনে। যৌতুকের কারণে ২০ জন নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে মৃত্যু হয় ১২ জনের। এই সময়ে চারজন নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ হয়।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সুরক্ষা ও নিরাপদে থাকার বদলে দেশের অনেক স্থানে নারী ও মেয়েশিশুরা নিজ ঘরেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, যা উদ্বেগজনক।

করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমও। তিনি বলেন, করোনার এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও নারী ও শিশুদের পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি যৌন সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে! সম্প্রতি কয়েকটি সহিংস ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ফেনীতে ফেসবুক লাইভে স্ত্রীকে এক ব্যক্তির কুপিয়ে হত্যা। ১৫ এপ্রিল ফেনীতে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন টুটুল ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি। এ সময় টুটুল পরপর ৯টি কোপ দিয়ে তার স্ত্রীকে আঘাত করেন। একপর্যায়ে তার স্ত্রী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ ছাড়া এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মাদারীপুর পুলিশের নারী সদস্য অনিমা বাড়ৈ (২৭) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন। এতে তার শ্বাসনালি অনেকটাই কেটে যায়। প্রেমের ঘটনায় এক যুবক অনিমাকে আঘাত করেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কেরানীগঞ্জে ত্রাণ নিতে গেলে দুর্বৃত্তরা ঘরে আটকে রেখে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া মার্চের শেষে জামালপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে তল্লাশির কথা বলে পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে পাঁচ বখাটে।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘যেহেতু এখন সার্বিক কর্মকান্ড ঘরকেন্দ্রিক, এজন্য প্রায়ই পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ আসছে। নারী ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন- এমন অভিযোগ আমরা পাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর