রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনায় হার মেনেছে ঐতিহ্য

এবার পুরান ঢাকায় নেই ইফতারির পসরা

আরাফাত মুন্না

এবার পুরান ঢাকায় নেই ইফতারির পসরা

পুরান ঢাকায় গতকাল ইফতারির বাজারের স্থানে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়ে পুলিশ বসতে দেয়নি ব্যবসায়ীদের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘এবার ইফতারে নেই মুরগির মুসাল্লাম, নেই বড় বাপের পোলায় খায়, তার পরও ইফতার করেছি।’ গত বছরের ইফতারির একটি ছবি পোস্ট করে এমন আক্ষেপ নিজের ফেসবুকে তুলে ধরেছেন পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের বাসিন্দা আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ। এমন আক্ষেপ হয়তো শুধু ইমতিয়াজ আহমেদের নয়, গোটা ঢাকাবাসীর। অন্য বছরগুলোতে পুরান ঢাকার চকবাজার, চানখাঁরপুল, অভিজাত এলাকা বেইলি রোড, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, উত্তরা থেকে রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, রাজধানী জুড়েই বসত বাহারি ইফতারির পসরা। বিকাল হলে ঢাকা পরিণত হতো ইফতারি মেলায়। তবে এবার তার কিছুই নেই। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সরকার রাজধানীসহ সারা দেশে ইফতারসামগ্রীর বাজার বসানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারসহ কোথাও ইফতারি বাজার বসেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রমজানের শুরুর দিন শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে ইফতারি বাজার বসেনি। ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’ বলে উচ্চ স্বরে নেই বিক্রেতাদের হাঁকডাক। গোটা চকবাজারের রাস্তাঘাট দখল করে বটিকাবাব, সুতাকাবাব, রেশমি কাবাব, জালিকাবাব, টিকিয়া, মুরগি মোসাল্লাম, খাসির লেগ রোস্ট, গরুর ভুনা মাংস, আস্ত কোয়েল ভুনা, শাহী জিলাপি, মাঠা, শরবত, হালিম ও বিভিন্ন ধরনের ফলমূলসহ খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেননি দোকানিরা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে গত বছর পর্যন্ত সময়ের পরিক্রমায় নতুন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে, পাঁচ তারকা হোটেল ও অনেক উন্নতমানের রেস্টুরেন্টে অনেক ইফতারসামগ্রী তৈরি ও বিক্রি হলেও সব ছাপিয়ে চকবাজারের ইফতারি সবার কাছে প্রিয়। একই বাজারে এত ইফতারির আইটেম আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই নগরবাসীর অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ইফতারি কিনতে চকবাজারে ছুটে আসেন। বিশেষ করে রমজানের প্রথম দিন মানুষের ভিড়ে পা রাখাই দায় হয়ে পড়ে চকবাজারে। অন্য বছরগুলোতে সাহরির পর থেকেই চকবাজারের ইফতারসামগ্রী তৈরির কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে সব। চেনা চকবাজার যেন অচেনা বাজারে পরিণত হয়েছে। ইফতার নিয়ে আক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহমেদ মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চকবাজারের ইফতার পুরান ঢাকাবাসীর শত বছরের ঐতিহ্য। অন্য বছরগুলোতে প্রথম রোজায় কম করে হলেও ৫০ রকমের খাবার থাকত। মুরগি মুসাল্লাম, খাসির লেগ রোস্ট, জালিকাবাব, জিলাপি আরও কত কি! তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে যেহেতু ইফতারি বাজার বসেনি, তাই ইফতারের সব আইটেম বাসায়ই তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সবাইকে বাসায় থাকতে হবে। তাই সাধ্যমতো বাসায়ই ইফতারসামগ্রী তৈরি করতে হবে। যদি আমরা বেঁচে থাকি, তাহলে পরে আবার ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবার দিয়ে ইফতার করতে পারব।’ রাজধানীতে বসবাসরত বড় একটি জনগোষ্ঠী এসব দোকানের ইফতারির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন হওয়ায় তারা পড়েছেন ভোগান্তিতে। বেশি বিপাকে পড়েছেন মেসে থাকা ব্যাচেলররা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নোমান মজুমদার মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দোকান খোলা থাকলে কিছু কিনে এনে ইফতার করতাম। কিন্তু এবার তো সব দোকান বন্ধ। আবার বুয়াও নেই। তাই নিজে ইফতারের জন্য বিশেষ কিছু করতে পারিনি। শরবত ও খেজুর খেয়ে সরাসরি ভাত খেয়ে ফেলেছি।’

ফুটপাথে ইফতারসামগ্রী বিক্রিতে ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা : করোনাভাইরাসের প্রভাবে রমজান মাস জুড়ে রাজধানীর ফুটপাথে সব ধরনের ইফতারসামগ্রী বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগরীর রাস্তা বা ফুটপাথে কোনো ধরনের ইফতারসামগ্রী বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে বিভিন্ন কাঁচাবাজার ও সুপারশপে ডিএমপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে নগরবাসীর সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর