মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

পরিকল্পিত পোনা সংগ্রহ হালদায়

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

পরিকল্পিত পোনা সংগ্রহ হালদায়

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহকারীদের প্রথমবারের মতো তৈরি করা হচ্ছে তালিকা। তাদের দেওয়া হবে হালদা কার্ড। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন এ তালিকা তৈরি করছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ ইতিবাচক হওয়ায় হালদা নদীতে বেড়েছে মা-মাছের আনাগোনা। ফলে ডিম সংগ্রহকারীরাও উৎসুখ হয়ে অপেক্ষায় আছেন। তাছাড়া এবার ডিম সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করতে তিনটি ইউনিয়নে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৬০টি বড় আকারের কুম (কুয়া) এবং তিনটি হ্যাচারি। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অতীতে বিচ্ছিন্নভাবে হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে ব্যক্তিগতভাবে অপরিকল্পিত পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদন করা হতো। ফলে নষ্ট হতো অনেক ডিম, তৈরি হতো না আশানুরূপ পোনা।

 এবারই প্রথমবারের মতো পরিকল্পিত প্রক্রিয়ায় ডিম থেকে পোনা উৎপাদনে তৈরি করা হয়েছে ৬০টি কুম ও তিনটি হ্যাচারি। তাছাড়া তৈরি করা হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্সা ও গড়দুয়ারা ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ ডিম সংগ্রহকারীর তালিকা। তালিকাভুক্তদের ডিম থেকে পোনা প্রক্রিয়াজাত করার পর পরিবহনে সুবিধা, ডিম সংগ্রহকারী হিসেবে সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে ডিম সংগ্রহ করে পোনা উৎপাদন করতে গিয়ে অনেক ডিম নষ্ট হয়। তাই গত বছরের অভিজ্ঞতা এবং হালদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কুম ও হ্যাচারি তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ডিম সংগ্রহকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ডিম সংগ্রহ থেকে শুরু করে পোনা উৎপাদন পর্যন্ত কাজগুলো যদি পরিকল্পিতভাবে করা হয়, তাহলে ডিম নষ্ট হওয়ার সুযোগ কম। এতে পোনার হারও বাড়ে। এবার পরিকল্পিতভাবে কাজগুলো করা হচ্ছে। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ।

জানা যায়, গতবারের চেয়ে এবার হালদা নদী থেকে বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহের আশা করছেন সংগ্রহকারীরা। অতীতের তুলনায় গত প্রায় দেড় বছর দূষণের হার কমছে। হালদা দূষণের প্রধান উৎস হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট এবং বেসরকারি এশিয়ান পেপার মিল। মা-মাছ ডিম দেওয়ার কাছাকাছি সময় গত এক মাস ধরে করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে কমছে অবৈধ জাল ফেলা। গত দেড় বছর ধরে কঠোর নজরদারিতে আছে উপজেলা প্রশাসনের। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১০১টি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু ও ২ লাখ ১৩ হাজার মিটার জাল, ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৯টি ড্রেজার ও ১২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ জব্দ করা হয় ৩ দশমিক ৫ মিটার, জরিমানা করা হয় ৯০ হাজার টাকা, কারাদন্ড দেওয়া হয় ৩ জনকে ও নিলামে বালু বিক্রি করা হয় দুই লাখ ২৫ হাজার টাকার। ফলে এবার হালদা নদীতে পোনা সংগ্রহকারীরা সুদিনের প্রত্যাশা করছেন। বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা ডিম সংগ্রহে। জানা যায়, হালদা নদী রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাছ প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়ে। স্থানীয়দের মতে, মুষলধারে বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, বজ্রপাত এবং অমাবশ্যা বা পূর্ণিমা (স্থানীয় ভাষায় তিথি বা জো) এসব একসঙ্গে থাকলে মা-মাছ প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে নমুনা ডিম ছাড়ে। এরপর পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ডিম ছাড়ে।

সর্বশেষ খবর