বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ঝুঁকি নিয়েই ঢাকায় ফিরছে সবাই

ট্রাকে আসছে গাদাগাদি করে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ফেরিতে ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝুঁকি নিয়েই ঢাকায় ফিরছে সবাই

মাওয়ায় গতকাল পিকআপে করে ঢাকামুখী মানুষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই সীমিত আকারে পোশাক কারখানা চালুর ঘোষণার পর থেকে কাজে যোগ দিতে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা। গতকালও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পোশাক শ্রমিকরা ঢাকা ফিরেছেন বলে আমাদের প্রতিনিধিদের খবরে বলা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কেউ ট্রাকে গাদাগাদি করে আবার কেউ অটোরিকশা বা ভ্যানে চড়ে ঢাকায় ফিরেছেন। কেউ কেউ পায়ে হেঁটেও ঢাকা এসেছেন বলে জানা গেছে। আগের দুই দিনের মতো গতকালও মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরিতে শ্রমিকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। একই দৃশ্য ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটেও।

ঢাকামুখী শ্রমিকরা জানান, কাজে যোগ দেওয়ার জন্য গার্মেন্ট থেকে ফোন করেছে। যে কারণে খুব কষ্ট করে দৌলতদিয়া এসেছি। মাগুরা ও যশোর থেকে আসা একাধিক যাত্রী বলেন, আমরা জনপ্রতি এক হাজার টাকায় গ্রামের ভিতরের রাস্তা দিয়ে দৌলতদিয়া পর্যন্ত এসেছি। এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমরা কাজে যাচ্ছি। রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পোশাক কারখানা চালুর ঘোষণায় কাজে যোগ দিতে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ বেড়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী ব্যাটারিচালিত অটোবাইক, মোটরসাইকেল ও মাহেন্দ্রযোগে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছেন। গতকাল ভোর থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী এসব যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে এসব যাত্রীর মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকই বেশি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসির) দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরি বহরে ১৮টি ফেরির মধ্যে সীমিত আকারে ৫টি ফেরি চলাচল করছে। জরুরি প্রয়োজনে পণ্য পরিবহনের কথা থাকলেও বিপুলসংখক পোশাক শ্রমিক নদী পার হচ্ছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি যাত্রী পারাপার ঠেকানোর জন্য। তবে মানবিক দিকটা বিবেচনা করে পোশাক শ্রমিকদের ফেরিতে উঠতে দেওয়া হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে গতকাল সকালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ফেরি ও ট্রলারে করে হাজার-হাজার যাত্রী পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসতে শুরু করেছে শিমুলিয়া ঘাটে। আর ট্রলারযোগে আসা যাত্রীদের নামানো হচ্ছে শিমুলিয়ার পদ্মার চরে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে রো-রো ফেরি শাহ পরান ও ডাম্প ফেরি রামশিংয়ে চড়ে গার্মেন্ট কর্মীরা পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসে পৌঁছান। এরপর শিমুলিয়া ঘাট থেকে তারা সিএনজি, অটোরিকশা কিংবা রিকশায় চড়ে আবার কেউ হেঁটেই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেন।

মাওয়া নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, সকালে রো-রো ফেরি শাহ পরান ও ডাম্প ফেরি রামশিং কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে এসে নোঙর করে। ফেরি দুটিতে কয়েকশ যাত্রী ছিল। আর এদের অধিকাংশই ঢাকামুখী গার্মেন্ট কর্মী। মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, সীমিত আকারে পোশাক কারখানা চালুর ঘোষণার পর মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে রাজধানীমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী ভ্যান, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে চড়ে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। গতকাল সকাল থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। এর মধ্যে গার্মেন্টে কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা লাফিয়ে ফেরিতে উঠছে। নাসির হোসেন নামে এক গার্মেন্ট কর্মী বলেন, গার্মেন্ট খোলা। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ঢাকায় যাচ্ছি।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাট থেকে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিনই যাচ্ছে শত শত নারী-পুরুষ। এবার অভিনব পদ্ধতিতে গার্মেন্ট কর্মীরা যাচ্ছেন ঢাকায়। ট্রাকের ভিতরে ৩০-৪০ জন নারী-পুরুষ বসিয়ে চারদিকে পলিথিন দিয়ে শক্ত রশি দিয়ে বাঁধা হচ্ছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে মালামাল বহন করা ট্রাক। কিন্তু ভিতরে কোনো মালামাল নেই, শুধু মানুষ। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাটের সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, বিষয়টি শুনেছি, খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর