কালের সাক্ষী দেশের বৃহত্তম হালতি বিল অধ্যুষিত এক প্রাচীন জনপদ নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর ইউনিয়ন। আর এই মাধনগরের ঐতিহ্য রথবাড়ি। দেড়শ বছরের পুরনো রথটি নাটোরের বিশেষ ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম। এটি উপমহাদেশের বৃহৎ ও প্রাচীনতম পিতলের রথ। ১৮৬৭ সালে পাবনার দিলালপুরের জমিদার যামিনী সুন্দরী বসাক এই পিতলের রথটি প্রতিষ্ঠা করেন। রথটির উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। বেদির আয়তন ১২ বর্গফুট। এর ১২টি চাকা আছে। চাকার ভিতরে রয়েছে ১২টি পিতলের পাত। রথে রয়েছে একডজন কোণ ও ১১২টি পিলার। রথের মালিকানায় ছিলেন নাটোরের জমিদার শৈলবালা ও কালিদাসী। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের তিথি অনুসারে এখানে মাসব্যাপী রথের মেলা ও পূজা-অর্চনা হতো। বীরকুৎসা ও গোয়ালকান্দির জমিদারের হাতি এসে রথযাত্রায় অংশ নিত এবং রথ টানার কাজ করত। এছাড়া অনুষ্ঠান হতো দোলপূর্ণিমায়। এখনো এই ঐতিহ্য অটুট আছে। রথের নামে বর্তমানে ১৫ বিঘা জমি রয়েছে। ১৮৬৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এখানকার যাবতীয় খরচ পাবনার দিলালপুরের জমিদার যামিনী সুন্দরী স্টেট থেকে আসত। দেশ বিভাগের পর আর কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পরবর্তী সময় চুরির কবলে পড়ে রথটি। এর নকশা, বিভিন্ন অংশ ও পিতলের তৈরি সারথিগুলো চুরি হয়ে যায়। ২০১২ সাল থেকে আবার রথমেলা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা-অর্চনা শুরু হয়। এখন আর আগের মতো জাঁকজমক না থাকলেও নিয়মিত পূজা-অর্চনা চলে। রথের নামে বর্তমানে ১৫ বিঘা জমি রয়েছে।
