শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যু বাড়ছে আইসোলেশনে

মানিকগঞ্জে ৩, চট্টগ্রামে ১

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীতে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন এক পুলিশ সদস্য। মানিকগঞ্জে মারা গেছেন তিনজন। আর চট্টগ্রামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে আইসোলেশনে থাকা অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

মানিকগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি তিনজনের মৃত্যু হয়। কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকায় স্বজনরা তাদের হাসপাতালে ভর্তি করান। গতকাল দুপুরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ জানান, মারা যাওয়া তিনজনই শ্বাসকষ্ট ও কাশিতে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের বাড়ি সদর উপজেলায় এবং একজনের বাড়ি ঘিওর উপজেলায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার মৃত নারী একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে স্বজনরা বুধবার সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে বুধবার বিকাল ৪টায় তিনি মারা যান। এর আগে কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে দুই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। সেখানে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে বুধবার রাত দেড়টায় একজন এবং রাত ২টার দিকে আরেকজন মারা যান।

এদিকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আইসোলেশনে থাকা পলাশ নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিআইটিআইডির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল হাসান চৌধুরী জানান, তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি দক্ষিণ কাট্টলি এলাকার বাসিন্দা। তার জ্বর, সর্দিসহ করোনা উপসর্গের লক্ষণ ছিল। এদিকে করোনায় পুলিশের এএসআই আবদুল খালেকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টের দক্ষিণ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তার প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেওয়ায় আরামবাগের একটি হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন। বুধবারই তার করোনা পজিটিভ বলে রিপোর্ট আসে। ওই দিন বিকালে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১২টায় তার মৃত্যু হয়। জানা যায়, বুধবার সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তির আড়াই ঘণ্টা পর এক যুবকের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া যুবকের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এ ছাড়া তিনি ডায়াবেটিস রোগেও ভুগছিলেন। আগের দিন একই হাসপাতালের আইসোলেশনে আরেক যুবকের মৃত্যু হয়। ওই যুবকের নাম সবুজ দাস (২৭)। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। এ ছাড়া ২৫ এপ্রিল শ্বাসকষ্ট নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দুই নারীর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া নারীদের একজনের বয়স ১৭ বছর। তিনি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আরেকজনের বয়স ৩০ বছর। তিনি চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা। মারা যাওয়া নারীদের একজন ২৪ এপ্রিল সকালে ও আরেকজন রাতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পর দিন সকালে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য দুজনের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। একই দিন ভোলায় করোনা সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তিনি দুই দিন আগে সেখানে ভর্তি হন। ওই ব্যক্তির ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট ছিল। মৌলভীবাজারে করোনা উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের রামনগর মণিপুরিপাড়া থেকে ২৪ এপ্রিল রাত ১০টায় হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পর দিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে আইসোলেশন কক্ষে তার মৃত্যু হয়। যশোরে জ্বর ও কাশি নিয়ে এক ব্যক্তি এবং এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ এপ্রিল রাতে এবং পর দিন ভোরে তাদের মৃত্যু হয়। ঝিকরগাছা উপজেলার বর্নি গ্রামের ২৪ বছর বয়সী ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হয়েছিলেন। রাতেই তার মৃত্যু হয়। একই দিন চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন। পর দিন ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ২৩ এপ্রিল সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান এক রোগী। ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর