শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকে ধ্বংস করে নাকের স্প্রে

রেমডেসিভির সক্ষমতার প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। কে আগে তৈরি করবেন এই প্রতিষেধক- তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতাও। কয়েকটি দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু হয়ে গেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তারা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাদের রেমডেসিভির কার্যকারিতার সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি গত বুধবার  জানান, পরীক্ষামূলক ড্রাগ ‘ REMDESIVIR’ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হতে পারে। তিনি বলেন, ভাইরাস দমনে তা সফল হতে পারে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, রোগীরা ১১ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন, যেখানে বর্তমানে আরোগ্য লাভে সময় লাগছে প্রায় ১৫ দিনের মতো। উল্লেখ্য, বিগত কয়েকটি মহামারী, যেমন SERS I MERS-G-এর ক্ষেত্রে এই ওষুধটি সফল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তবে এখনো এই ড্রাগটিকে বিশ্বের কোথায়ও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

করোনা ধ্বংস করে নাকের স্প্রে : করোনার চিকিৎসায় এবার নতুন ওষুধ তৈরি করেছেন স্কটল্যান্ডের গবেষকরা। অ্যান্টিভাইরাল বা ভাইরাসরোধক ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে নাকের স্প্রে হিসেবে। সেটি এখন করোনার ওষুধ হিসেবে আশার বাণী শোনাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এ স্প্রে করোনাভাইরাসকে ফুসফুসের কোষে প্রবেশের আগেই আটকে দেবে। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো যখন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ওষুধ উদ্ভাবন নিয়ে ব্যস্ত, তখন স্কটল্যান্ডের এ ওষুধটি করোনা প্রতিরোধে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

এরই মধ্যে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। ওষুধটির গবেষণায় থাকা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘নিউমিফিল’ নামক ওষুধটি তৈরি করা হয়েছিল ফ্লুর চিকিৎসায়। এখন এটি কভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও সাফল্য দেখাচ্ছে।

আশার আলো দেখাচ্ছে ফেমোটিডিনও : করোনা রোগীদের ওপর ফেমোটিডিন নামের একটি ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সায়েন্স সাময়িকীতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় এ ওষুধে সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে খবর বেরিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। সিএনবিসির খবর অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা নর্থওয়েল হেলথের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ডাউলিং বলেন, ‘যেসব বিজ্ঞানী এ ওষুধটির ট্রায়াল নিয়ে কাজ করছেন তাদের এর কার্যকারিতার বিষয়ে  যৌক্তিক আত্মবিশ্বাস আছে। 

সেপ্টেম্বরে আসতে পারে টিকা : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, তারা খুবই আশাবাদী যে, আগামী সেপ্টেম্বরে বাজারে আসতে পারে তাদের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন। সিবিএস নিউজ জানায়, ভ্যাকসিন তৈরির কাজটি অন্যদের আগেই শুরু করে অক্সফোর্ড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর জানুয়ারিতেই প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করে দেয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট।

কভিড-১৯ এর সমগোত্রীয় ভাইরাসের টিকা এরই মধ্যে তৈরি করেছেন অক্সফোর্ডের গবেষকরা। এটি তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভ্যাকসিনলজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেন, ‘ভ্যাকসিনটির বিষয়ে আমার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস আছে। কারণ, এর প্রযুক্তি আমি আগেই ব্যবহার করেছি। সেখানে সফল হয়েছি।’ নতুন ভ্যাকসিন তৈরিতে করোনাভাইরাসের জেনেটিক উপাদান নেওয়া হয়েছে। পরে তা সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাসে ইনজেকশন হিসেবে পুশ করে দেখা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে ভাইরাস। এটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। মোডিফায়েড ভাইরাসটি কভিড-১৯-এর অনুকরণে হবে। সেটি প্রকৃত কভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করবে। এক্ষেত্রে সাফল্যের বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’

প্রসঙ্গত, একদল বানরের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে অক্সফোর্ডের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এতে সুফল পাওয়া গেছে। তা ছাড়া ৫৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরেও এই ভ্যাকসিন পুশ করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী এলিসা গ্রানাটোও রয়েছেন। তিনি বেশ ভালো আছেন। কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়নি। এই ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেষমেশ আমি কিছু একটা করতে সমর্থ হয়েছি, আমার মধ্যে এমন এক অনুভূতি কাজ করছে। ভ্যাকসিন তৈরিতে অবদান রাখতে এভাবেই আমার সুযোগ হয়েছে।’ এদিকে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন এখনো না মিললেও বসে থাকার সময় নেই প্রস্তুতকারীদের। তাই ভারতভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আগামী মাসেই অক্সফোর্ডের কয়েক লাখ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করে দেবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর