রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সামাজিক সংকট বাড়াবে বেকারত্ব

মানিক মুনতাসির

মরণঘাতী ভাইরাস কভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্ব খাদ্য সংকটের কারণে দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, বিশ্বর ১৬০ কোটি মানুষ জীবিকার ঝুঁকিতে পড়েছে। সারা বিশ্বর মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন ৪৩ কোটি ৩০ লাখ প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু আবাসন খাতের সঙ্গে জড়িত ৪ কোটির বেশি প্রতিষ্ঠানে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আমেরিকাতেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। আইএলওর তথ্যমতে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৭০ শতাংশ কর্মীই কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের  পরিস্থিতিও মোটেই সুখকর নয়। নতুন করে কতসংখ্যক মানুষ বেকার হবেন তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনই বলা যাবে না। তবে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অন্তত দুই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবে। আর এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বেকারত্বের সঙ্গে বাড়বে সামাজিক সংকটও। কেননা ক্ষুধার্ত মানুষ হয়ে উঠবে অপরাধপ্রবণ। ক্ষুধা মানুষকে পশুর চেয়ে অধম বানিয়ে ফেলতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।  এ পরিস্থিতি থেকে বিশ্ব মুক্তি পেতেও প্রয়োজন হবে অনেক সময়ের। বাংলাদেশের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ এখনই নেওয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। একদিকে ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার পৌঁছে দিতে হবে নিশ্চিতভাবে। মানুষ যেন কোনোভাবেই এটা ধারণা করে ফেলতে না পারে যে সে না খেয়ে মারা যাবে। তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এতে মানুষের কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে আসবে। তখন মানুষের মধ্যে হানাহানি বাড়বে। এমনকি খাবারের জন্য একজন আরেকজনকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবে না। ফলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্র, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজপতি, শিল্পপতি, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, মানুষকে কাজ করতে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবে সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই মানতে হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কভিড-১৯ পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। কেননা স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হচ্ছে। সেটা কার মাধ্যমে কে সংক্রমিত হচ্ছে, আর কে যে এই ভাইরাস বাহক তা বলা সম্ভব নয়। ফলে প্রত্যেককে আরও সচেতন হতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এটার উন্নতি করতে না পারলে পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপ হয়ে যাবে।  একইভাবে সব ধরনের কল-কারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য উৎপাদন বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এখন কিছু কারখানা খোলা হয়েছে। সেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আবার ক্ষুধার তাড়নার মানুষকে কাজও করতে হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি খুবই জটিল পর্যায়ে চলে গেছে।  আইএলওর তথ্যমতে, বিশ্বর ২০০ কোটি মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে ৩৩০ কোটি মানুষ কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কভিড-১৯ এর প্রভাবে এর ১৬০ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এটার সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সরাসরি জড়িত। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ৪৩ কোটি ৩০ লাখ প্রতিষ্ঠানে মারাত্মকভাবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ কোটি খুচরা ব্যবসা, ১১ কোটি ১০ লাখ উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ৫ কোটি ১০ লাখ খাদ্য ও সেবার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং ৪ কোটি ২ লাখ আবাসন ও অন্যান্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতির মাত্রা ততটাই বেশি হবে, কভিড-১৯ এর প্রভাব যতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে।

সর্বশেষ খবর