রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজধানীর বুকে কৃষ্ণচূড়ার ছড়াছড়ি

মোস্তফা কাজল

রাজধানীর বুকে কৃষ্ণচূড়ার ছড়াছড়ি

রাজধানীর কয়েকটি সড়কের পাশে ফুটেছে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল। ফলে এসব সড়কের পাশ সেজেছে প্রকৃতির রাঙা মঞ্জুরিতে। গ্রীষ্মের এই নি®প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। যেন লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বন্ধ দেশের বেশিরভাগ অফিস-আদালত, শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন। ফলে সারা দেশের প্রকৃতিতে বিরাজ করছে সুনশান-নীরবতা। ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের দুই পাশের মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কে চোখ ধাঁধাঁনো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে। একইভাবে সেজেছে মিরপুর ও বিমানবন্দর সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান। এ ছাড়া রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের কৃষ্ণচূড়া গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে লাল ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি। সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এ সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। তবে হলুদ ও সাদা কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। কৃষ্ণচূড়ার গাছ অনেক জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে। বাংলাদেশ প্ল্যান্ট ফ্লাওয়ার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার অঞ্চলে। এ বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারিবীয় অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে।

 এ ফুল সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও, এ গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারণত ১২-১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭-৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভিতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। যেমন, আমেরিকার দক্ষিণ ফ্লোরিডায় জুনে, আরব আমিরাতে সেপ্টেম্বরে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে মে থেকে সেপ্টেম্বর, ভারতে এপ্রিল থেকে জুন ও অস্ট্রেলিয়ায়-ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে ফুল ফোটে। পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘বারসিক’ কর্মকর্তা বিমল রায় জানান, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বহু আন্দোলনের পটভূমির সঙ্গে কৃষ্ণচূড়া গাছের সম্পর্ক খুব নিবিড়। শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে। শখের বশে এ গাছের কদর রয়েছে অনেকের কাছে।

সর্বশেষ খবর