রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

টেকনাফের পোকা পঙ্গপাল নয়, ঘাসফড়িং প্রজাতির

পরিদর্শন শেষে কীটতত্ত্ববিদ প্রতিনিধি দল

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফে আক্রমণ করা পোকা পঙ্গপাল নয়, সেগুলো ঘাসফড়িং প্রজাতির- পরিদর্শন শেষে জানিয়েছে প্রতিনিধি দল। গতকাল দুপুরে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকায় ঢাকা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলের সদ্যসরা হচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ঢাকা খামারবাড়ীর উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের উপ-পরিচালক মো. রেজাউল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (কীটতত্ত্ব বিভাগ) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. নির্মল কুমার দত্ত, পিএসও (কীটতত্ত্ব বিভাগ), ড. এ কে এম জিয়াউর রহমান, পিএসও (কীটতত্ত্ব বিভাগ), মো. শরফুদ্দিন ভূঁইয়া, আইপিএম স্পেশালিস্ট আরিফুর রহমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা  ইনস্টিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল বারী ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. পান্না আলী, টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামসহ বিভিন্ন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নির্মল কুমার দত্ত বলেন, ‘আমরা কীটতত্ত্ববিদ বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছি। ইতিমধ্যে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে, টেকনাফের এ অঞ্চলে পঙ্গপালের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আসলে আমরা সরেজমিন দেখলাম, এটি বিধ্বংসী পোকা পঙ্গপাল নয়। যেটি আমরা ইতিমধ্যে জাতীয়ভাবে শনাক্ত করতে পেরেছি, এটি একটি ঘাসফড়িং। ইংরেজিতে এটিকে aularches miliaris বলে। এটি বিভিন্ন বন-জঙ্গলে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ফসলের ক্ষতি করে। তবে বড় কোনো ক্ষতি করে না। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা অতি আগে থেকে বাংলাদেশের রেকর্ডে ছিল। আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এটি আগে থেকেই পরিচিত একটি পোকা। স্থানীয় একজন কৃষক আমাদের বলছেন, এটি বর্মাচান্ডালি নামে পরিচিত।’ কেন এটি বর্মাচান্ডালি নামে পরিচিত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি যেহেতু বার্মা (মিয়ানমার) থেকে এসেছে, সে জন্য এটিকে এই নামে ডাকা হয়। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশে এর উপস্থিতি আছে। ঢাকার খামারবাড়ী উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের উপ-পরিচালক মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে এই পোকাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা আমাদের মধ্যেও ছিল। তবে আমাদের প্রতিনিধি দল এটি নিশ্চিত করেছে, এটি আসলে পঙ্গপাল নয়, এটি ঘাসফড়িংয়ের একটি প্রজাতি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কক্সবাজার এবং স্থানীয় কৃষি অফিস ইতিমধ্যে সাইফার মেট্রিনজাতীয় কীটনাশক ¯েপ্র ব্যবহার করে এটি দমন করতে সক্ষম হয়েছে। ¯েপ্র করার পর এখানে জীবন্ত একটি পোকাও দেখা যায়নি। তবে এখানে এ পোকার আক্রমণের কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এরপরও পোকার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা গবেষণাগারে নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা ও মনিটরিং করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, টেকনাফের লম্বরী গ্রামের একটি বাড়ির আমগাছসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছের শাখা-প্রশাখায় সম্প্রতি দেখা মেলে এক ধরনের পোকার। পোকাগুলো গাছের পাতা স¤পূর্ণ খেয়ে ফেলছে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলে হইচই পড়ে যায়। একে পঙ্গপাল মনে করা হয়। কৃষি বিভাগও নড়েচড়ে বসে।

সর্বশেষ খবর