রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

নিউইয়র্কে ডক্টর অব হিউম্যানিটি হয়ে লড়ছেন বাংলাদেশি চিকিৎসক

প্রতিদিন ডেস্ক

নিউইয়র্কে ডক্টর অব হিউম্যানিটি হয়ে লড়ছেন বাংলাদেশি চিকিৎসক

বিশ্বের অনেক বড় বড় চিকিৎসক করোনার ভয়ে চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন, সেখানে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন মানবিকতায়। তিনি দায়িত্বের ঊর্ধ্বে উঠে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। চিকিৎসাবঞ্চিত করোনা আক্রান্ত রোগীরা এ সম্মুখ যোদ্ধার নাম দিয়েছেন ‘ডক্টর অব হিউম্যানিটি’। তিনি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি করোনায় মৃতদের দাফনের খরচ, খাদ্য সহায়তা ও সুরক্ষাসামগ্রী দিচ্ছেন। এমন মহৎপ্রাণ চিকিৎসকে পেয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের গর্বের শেষ নেই। তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব শেষে করোনা রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার মতে, তিনি যদি করোনা রোগীদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেন, তাতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেই পিপিই ও মাস্ক সংকটে ভুগছেন ডাক্তার ও নার্সরা।  ডা. ফেরদৌস খন্দকার অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। যাতে হাসপাতালে রোগীর ভিড় না জমে। তিনি জানান, নিউইয়র্কের চিকিৎসকদের পাশে এসে স্বেচ্ছায় এসে দাঁড়াচ্ছেন অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের চিকিৎসকরা। কোনো অজুহাত না দেখিয়ে নিজ খরচে তারা করোনার বিরুদ্ধে লড়ছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, গত চার সপ্তাহ প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা কাজ করছি। নিজের চাকরির পাশাপাশি ঘরে ঘরে গিয়ে রোগী দেখছি। আমার কাজ হলো, যদি ৫০ জনকেও সেবা দিয়ে হাসপাতাল বিমুখ করে সুস্থ রাখতে পারি, তাহলে হাসপাতালের ওপর চাপ পড়বে না। এতে অনেক ইতিবাচক ফল দেখা যাবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রে পিপিই সংকট বেশি।

এখানে আমাকে একটা পিপিই দেওয়া হয়েছে একদিনের জন্য। আমি পাঁচ দিন পর গিয়ে আরেকটা পিপিই চেয়েছি। যখন বললাম পিপিই থেকে মরা মানুষের গন্ধ আসছে, তখন আমাকে আরেকটা দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে কাজ করছি। উপায় না দেখে নিজের পিপিই নিজেই বানিয়েছি।  নিউইয়র্ক মৃত্যুপুরী হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহর ও অঙ্গরাজ্য থেকে প্লেনভর্তি হয়ে চিকিৎসকরা এখানে নিজ খরচে সেবা দিতে আসছেন জানিয়ে ডা. ফেরদৌস আরও বলেন, ওই চিকিৎসকরা এখানে না এলেও পারতেন, তারা ঘুমাতে পারতেন অন্যদের মতো। কিন্তু তারা আসছেন নিজের খরচে, তারা আমাদের পেছনে দাঁড়িয়েছেন।

এমন সংকটকালে মানবিকতাকে যদি নিজের স্কিলের সঙ্গে যোগ করতে না পারা যায়, তাহলে জীবনের শেষান্তে দেখা যাবে কিছু নেই।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। এখনো এর প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এ মহামারী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে, আর আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর হচ্ছে দেশটির করোনাভাইরাসের মূল কেন্দ্র এবং সেখানে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার মানুষ মারা গেছেন।

সর্বশেষ খবর