সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকামুখী শ্রমিকের ঢল চলছেই

বিশেষ প্রতিনিধি

ঢাকামুখী শ্রমিকের ঢল চলছেই

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গতকাল ঢাকামুখী মানুষের ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা কয়েকদিন ধরেই চলছে ঢাকামুখী শ্রমিকের ঢল। কেউ চাকরি বাঁচানোর জন্য কেউবা বকেয়া বেতন পাওয়ার আশায় ছুটছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। দেশে গণপরিবহন বন্ধ এবং প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা উপেক্ষা করেই সব প্রবেশ পথ ব্যবহার করে রাজধানীতে ঢুকছে হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গত কয়েকদিন ধরে যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় আসতে থাকা শ্রমিকদের একটা বড় অংশ পায়ে হেঁটেই যাত্রা শুরু করেন। পথে যে যেখানে যেমন যানবাহন পেয়েছেন তাতেই সওয়ার হয়েছেন। গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সব ধরনের যান চলাচল বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।  গতকাল গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও সাভারের পথেই দেশের সব বয়সের মানুষের পদঘাতের শব্দ ধ্বনিত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- মুন্সীগঞ্জ : কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটের শিমুলি ঘাটে গ্রাম ছেড়ে ঢাকামুখী মানুষের চাপ দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটে যানবাহনের অভাবে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় জমে। শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে ট্রলারে চড়ে বেশিরভাগ লোক আসছে, এ ছাড়া সকালে ছেড়ে আসা ফেরিগুলোতে যানবাহনের চেয়ে মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। যেন দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরার মতো মানুষের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, শুধু নাই যানবাহনের চাপ। সকাল থেকেই কাঁঠালবাড়ী ঘাট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট শ্রমিকের সংখ্যা বলে জানা গেছে। অবশেষে তারা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে কোনো ধরনের গণপরিবহন না পেয়ে জেলার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে ছোট ছোট যানবাহনের মাধ্যমে ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বেশ কয়েক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গার্মেন্ট চালুসহ তাদের বেতন দেওয়া হবে খবরে তারা কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ছুটছেন। এ দিকে করোনাভাইরাসের এই চরম মুহূর্তে এত মানুষের সমাগম এবং স্বাস্থ্যসচেতনতার ঘাটতির কারণে বড় ধরনের মাশুল গুনতে হতে পারে বলে সচেতন মহল দাবি করছে।

রাজবাড়ী : করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ কমেছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। সীমিত আকারে পোশাক কারখানা খোলার পর থেকে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ দেখা যায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। গতকাল সকাল থেকে দেখা যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল এবং মাহেন্দ্র গাড়িতে দৌলতদিয়া পাঁচ নম্বর ফেরিঘাটে এসে ফেরিতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট পার হতে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা বলেন, পোশাক কারাখানা থেকে ফোন করার কারণেই তাদের ঢাকায় যেতে হচ্ছে। গণপরিবহন না থাকার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে দৌলতদিয়া পর্যন্ত আসতে হয়েছে। দৌলতদিয়া পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে অনেক পোশাক শ্রমিকসহ জরুরি কাজে ঢাকামুখী যাত্রী পারাপার হয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তে আসা পোশাক শ্রমিকই ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসির) দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে জরুরি পণ্য ও সেবা প্রদানের জন্য পাঁচটি ফেরি চলাচল করে। গত কয়েকদিন ধরে ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও আজ সেটি অনেক কমে এসেছে। তবে কত যাত্রী পারাপার হয়েছে সে কথা তিনি জানাতে পারেননি।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, সীমিত আকারে পোশাক কারখানা খোলার পর দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ ছিল সেটি হ্রাস পেয়েছে। আজ অল্প কিছু পোশাক শ্রমিক দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় গিয়েছে এবং মানবিক কারণেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইল : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু কিছু গার্মেন্ট খোলা থাকায় গতকালও বিভিন্ন পন্থায় ঢাকায় ফিরছে পোশাক শ্রমিকেরা।

গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব, এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল বাইপাস, মির্জাপুরে দেখা গেছে মানুষের জটলা। জীবিকার তাগিদে তারা ছুটছে কর্মস্থলে। গার্মেন্ট কর্মীরা জানান, অফিস থেকে তাদের জানানো হয়েছে গার্মেন্ট খোলা হয়েছে। তাদেরকে কাজে যোগদিতে বলা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এভাবে তারা যাচ্ছে। তবে মহাসড়কে গণপরিবহন না থাকায় অনেকেই পায়ে হেঁটে অটোরিকশায় ও মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

মাদারীপুর : সীমিত আকারে পোশাক কারখানা চালু করার ঘোষণার পর থেকেই মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ-রুটে রাজধানীমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীরা ভ্যান, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে চড়ে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে ভিড় জমাচ্ছে। রবিবার সকাল থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। এর মধ্যে গার্মেন্টে কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা লাফিয়ে লাফিয়ে ফেরিতে উঠছে। মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম মিয়া জানান, সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর এই নৌ-রুটে চলাচলকারী ১৭টি ফেরির মধ্যে ১০টির চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স ও সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পারাপারের জন্য সাতটি ফেরি সীমিত আকারে চলাচল করে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ফেরিতে পারাপার হচ্ছে। অনেকেই আবার ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা নদী।

সর্বশেষ খবর