সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

নমুনা সংগ্রহের দুই ঘণ্টা পর ছাত্রীর মৃত্যু টেস্ট করাতে এসে মারা গেলেন বৃদ্ধ

সর্দি কাশি জ্বর নিয়ে চারজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লার চান্দিনায় করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের প্রায় দুই ঘণ্টা পর এক কলেজছাত্রীর (১৭) মৃত্যু হয়েছে। ভোমরকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় তার। ওই ছাত্রী পার্শ¦বর্তী বরুড়া উপজেলার খোসবাস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

নিহতের চাচা মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার সফিকুর রহমান জানান, গত ১৫-২০ দিন জ্বর-কাশিতে ভুগছিল সে। প্রাথমিকভাবে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে এক সপ্তাহ আগে রামমোহন বাজারের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক মাহবুবুর রহমানের কাছে চিকিৎসা নেয়। সেখানে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়। তারপরও জ্বর কমেনি, সঙ্গে যুক্ত হয় নিউমোনিয়া। ইউপি মেম্বার আরও জানান, শুক্রবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার  মোবাইল নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানানোর পর তিনি একটি ইনজেকশনের নাম বলে দেন। শনিবার সকালে তিনি ফোন করে খোঁজ খবর নিয়ে বলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভর্তি না করে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে আসার পর বিকাল ৪টায় মৃত্যু হয় কলেজছাত্রীর। ইউপি মেম্বার সফিকুর রহমান আরও জানান, বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফোন করে বলেন, ‘একজন লোক পাঠিয়ে দেন, আমি কিছু পিপিই দেব। সেগুলো পরেই দাফন কাজ করতে হবে।’ রাত ৯টার দিকে তিনজন লোক পিপিই পরে দাফন সম্পন্ন করেন। সঙ্গে মসজিদের ইমামসহ পরিবারের আরও চারজন লোক জানাজায় অংশ নেয়। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহসানুল হক বলেন, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টে চারজনের মৃত্যু : সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও চারজন মৃত্যুবরণ করেছেন। ঢাকা, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে এসব মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেউ করোনা টেস্ট করাতে এসে, কেউ হাসপাতালে, আবার কেউ নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাগুলোতে। তাদের বাড়িঘর এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার টেস্ট করাতে এসে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় মৃত্যু বরণ করেন আবদুর রাজ্জাক (৬৩)। তিনি থাকতেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। গ্রামের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। এ সময় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি বলেন, তিনি মোহাম্মদপুর থেকে করোনা টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ নিচে পড়ে গিয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রমনা থানার এসআই খালেদ আনোয়ার। তিনি জানান, গতকাল সকালে তিনি মারা গেছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে করোনা বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোরশেদা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে, গত শনিবার দুপুরে জ্বর, সর্দি, বমি ও গলাব্যথা নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসেন ওই নারী। এরপর জরুরি বিভাগ থেকে তাকে ভর্তি করে হাসপাতালে ৫তলা মহিলা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। জানা গেছে, মৃতের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর থানার মাদবর চর গ্রামে। তার স্বামীর নাম মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি জুরাইনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। অন্যদিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার ১ ঘণ্টার মধ্যেই জ্বর–কাশিতে আক্রান্ত কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার এক কলেজছাত্রী (১৭) মারা গেছে। গত শনিবার বিকাল চারটার দিকে সে মারা যায়। ভোমরকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় তার। ওই ছাত্রী পার্শ¦বর্তী বরুড়া উপজেলার খোসবাস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। নিহতের চাচা মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার সফিকুর রহমান জানান, ১৫/২০ দিন হলো জ্বর-কাশিতে ভুগছিল সে। প্রাথমিকভাবে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে এক সপ্তাহ পূর্বে রামমোহন বাজারের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয়। সেখানে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়।

তারপরও জ্বর কমেনি, সঙ্গে যুক্ত হয় নিউমোনিয়া। তিনি জানান- শুক্রবার তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কল করে বিষয়টি জানানোর পর তিনি একটি ইনজেকশনের নাম বলে দেন। শনিবার সকালে তিনি ফোন করে খোঁজখবর নিয়ে বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভর্তি না করে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে আসার এক ঘণ্টা পর বিকাল ৪টায় মৃত্যু হয় তার।

ইউপি মেম্বার সফিকুর রহমান আরও জানান- বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফোন করে বলেন, ‘একজন লোক পাঠিয়ে দেন, আমি কিছু পিপিই দেব। আর সেগুলো পরেই দাফন কাজ করতে হবে।’ রাত ৯টার দিকে তিনজন লোক পিপিই পরে দাফন কাজ সম্পন্ন করেন। সঙ্গে মসজিদের ইমামসহ পরিবারের আরও চারজন লোক জানাজায় অংশ নেয়। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহসানুল হক বলেন- নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক মাদ্রাসাছাত্রীর (১৩) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল নয়টার দিকে কাবিলপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে নানাবাড়িতে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ওই কিশোরী স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি বেগমগঞ্জ উপজেলায়। তবে সেনবাগে নানাবাড়িতে থেকে পড়ালেখা করত। দুই দিন আগে স্থানীয় একটি পুকুরের পানিতে দীর্ঘসময় গোসল করে মেয়েটি। এরপর থেকে সে হালকা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, কিশোরীর শারীরিক অবস্থা ততটা গুরুতর ছিল না। তাই নানাবাড়ির লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি। স্থানীয় কোনো চিকিৎসককেও দেখাননি। এরই মধ্যে গতকাল সকাল নয়টার দিকে মেয়েটির মৃত্যু ঘটে। উপসর্গ করোনার মতো হওয়ায় স্থানীয় লোকজন বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। এরপর এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকসহ নমুনা সংগ্রহকারী দল ওই বাড়িতে যায়। দলটির সদস্যরা মৃত মেয়েটি, তার মা ও নানীর নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ইতিমধ্যে নমুনা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, মেয়েটির নানাবাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই বাড়ির ১৫টি পরিবারের প্রায় ৬০ জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর